দেশে নিবন্ধিত অনলাইন পোর্টালগুলোতে টকশো বা নিউজ বুলেটিন প্রচার অনলাইন নীতিমালা অনুমোদন করে না বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।
সোমবার (১৩ জুন) সচিবালয়ে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন এ্যাটকো নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-এটকো’র পক্ষ থেকে সহসভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে ছয় দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকপত্র হস্তান্তর করেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আইন কানুন ঘেটে দেখেছি। প্রচলিত বিধি বিধান ঘেটে দেখেছি যে, অনলাইন পোর্টালগুলো এবং পত্রিকার অনলাইন সেগুলোর আসলে টকশো বা নিউজ বুলেটিন করা সমিচীন নয়। এটি অনলাইন নীতিমালা অনুমোদন করে না। যেহতু আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, সব অনলাইন পোর্টাল যারা নিবন্ধন পেয়েছে এবং পত্রিকার অনলাইন যেগুলোর নিবন্ধন রয়েছে, তাদের আমরা বিষয়টি জানিয়ে দেব।
তিনি বলেন, পত্রিকার অনলাইনগুলোও নিবন্ধন নিয়েছে এবং তাদের শর্ত ছিলো পত্রিকায় যে কন্টেন্ট আছে সেটাই তারা দিতে পারবে। সেটা তারা নিয়মিত আপডেট করতে পারবে, কিন্তু টক শো বা বুলেটিন প্রচার করা নীতিমালায় বলা নেই। তারা করতে পারবে না। আমি মনে করি নিউজ সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল বাইট যেতে সমস্যা নেই। কিন্তু টেলিভিশনের মতো বুলেটিন প্রচার করা তো অনুমোদিত নয়। অনেকেই জানেননা বলে করেছে, এমনও আছে। বিষয়টি পরিস্কার নয় দেখে করছে। আমরা আগে জানাব, যাতে তারা নিজেরাই ব্যবস্থা নেয়।
অনুমোদনহীন আইপি টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আইপি টিভির বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সতর্ক আছি। মাত্র ১৩টি আইপি টিভির নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এ সময় শর্ত আছে তারা কোনো সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না, এটা মেনেই তারা নিবন্ধন নিয়েছে। এর বাহিরেও চলছে। আমরা খুব সহসা নিবন্ধনহীন যেগুলো আছে- তারা বিভিন্ন সময় গুজব রটাচ্ছে, অনেকে আইপি টিভির নামে ইউটিউব খুলে সেটির মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে। এ অভিযোগ সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে করা হয়েছে, তারা নানা রকম অপকর্মে যুক্ত। এ ধরনেরগুলোর বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে বন্ধ করার ব্যবস্থা আমরা করবো।
দেশে সবাই ক্লিন ফিড চালাতে বাধ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা দেশে সম্প্রচার করতে চায় তারা কিন্তু ক্লিন ফিড চালাচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ বড় শহরগুলোতে সমস্যা নেই। কিন্তু উপজেলা বা দুর্গম এলাকায় জেলা পর্যায়েও কোনো কোনো জায়গায় এর ব্যতয় হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে খুব সহসাই আমরা অভিযান পরিচালনা করব। আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব।
পত্রিকার অনলাইনে ভিডিও প্রচার বন্ধ, আইপি টিভিতে সংবাদ প্রচার বন্ধ, ক্লিনফিড পূর্ণ বাস্তবায়ন, টিআরপি সার্ভিস চালু করা, ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল করা ও বিদেশি মডেল দিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণে বিশেষ কর নির্মাতা সংস্থার ওপর আরোপের লিখিত দাবি জানিয়েছে এটকো।
সংগঠনটির সহসভাপতি বলেন, অনলাইন পত্রিকা ও সংবাদপত্রে যে ডিজিটাল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে সেটি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। বলেছিলাম যে, এটি পত্রিকার ডিক্লারেশনের আইনের বরখেলাপ। এমনকি এগুলো সম্প্রচার আইনেরও পরিপন্থি। পাশাপাশি যে অনলাইন নীতিমালা আছে, নীতিমালাতেও এটি অনুমোদন নেই। যারা এ ধরণের কাজ করছে, তাদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।
ইকবাল সোবহান বলেন, দুই দিন আগে আমাদের সম্পাদক পরিষদ একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের বিবৃতি সংবাদপত্রের পক্ষে, কিন্তু ব্যাখ্যা সত্য নয়। পত্রিকার ডিক্লারেশন দেওয়া হয় পত্রিকা প্রকাশ করার জন্যে। পত্রিকার যে অনলাইন আছে সে অনলাইনে পত্রিকাতে যে সংবাদ আছে, ছবি আছে, সম্পাদকীয় আছে, মতামত আছে সেগুলো ই-পেপার হিসেবে আপলোড করতে পারে। এবং সারাদিন ইচ্ছে করলে ২৪ ঘণ্টায় সংবাদ আপলোড করতে পারে। কিন্তু কোনো ডিজিটাল কনটেন্ট আপলোডের কথা এই ডিক্লারেশনের মধ্যেও নেই, অনলাইনের আইনের মধ্যেও নেই।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সিডান গাড়ির অনুমতি নিয়ে কি আমি বাস-ট্রাক চালাতে পারি? অথবা বাস-ট্রাক চালানোর অনুমতি নিয়ে আমি তো লঞ্চ-স্টিমার চালাতে পারি না। তাই আমি মনে করি, সবারই আইনগতভাবে এবং আইন মেনে চলা উচিত। আজকে লিখিতভাবে আমরা এটকোর পক্ষ থেকে আমাদের দাবিগুলো দিতে চাচ্ছি। আশা করি মন্ত্রণালয় এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে।