অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে ‘নবদিগন্তের পথে’ প্রকল্পের পর নতুন আরো একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ‘নবজাগরণ’ নামের এই প্রকল্পটি মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া-বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার কাজ করবে। এর ফলে অপরাধ করার ঝুঁকিতে থাকা লোকরা সুন্দর জীবন গঠন করতে পারবে। অপরাধ প্রতিরোধবিষয়ক সাম্প্রতিক স্ট্র্যাটেজির আওতায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার স্লোগান হলো- ‘নবজাগরণ-অপরাধকে না বলুন’।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া ব্যক্তি, বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারী এবং অপরাধপ্রবন লোকদের চিহ্নিত করে তাদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াস নিয়ে ‘নবজাগরণ-অপরাধকে না বলুন’ শীর্ষক ৩ সপ্তাহব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- পর্যটন নির্ভর পেশা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয়, ট্যুরিস্ট গাইড, ফটোগ্রাফার, সার্ফিং ও ড্রাইভিং। এছাড়া নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হবে।
প্রাথমিকভাবে ৩৫ জন নারী-পুরুষকে এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে বলে আশা করছে র্যাব।
সোমবার এই কক্সবাজারে কর্মশালাটিরর উদ্বোধন করা হবে। সকাল ১০টায় কক্সবাজারে র্যাব-১৫ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের পাশে অবস্থিত বসুন্ধরা এমিউজমেন্ট পার্কে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করবেন র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস্), অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) এবং স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
র্যাব সূত্র জানায়, এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো- অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে অপরাধে জড়াতে নিরুৎসাহিত করা। আর এটা করতে পারলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে। সামাজিক, পারিবারিক ও মনস্তাত্ত্বিক অন্তরায় সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোকে প্রধান্য দেওয়া হবে নবজাগরণের মাধ্যমে। যাতে সমাজের আবালবৃদ্ধবনিতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অপরাধ না করার ব্যাপারে সচেতন থাকে।
অপরাধ পর্যালোচনা ও গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে র্যাব নানা সময়ে নানা কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। এরই অংশ হিসাবে চালু হচ্ছে ‘নবজাগরণ’। এটি হলো র্যাবের আর্লি ইন্টারভেনশন। এর আগে ‘নবদিগন্তের পথে’ র্যাব যেসব কাজ করেছে, সেগুলো ছিল পোস্ট ইন্টারভেনশন। যাদের পোস্ট ইন্টারভেনশন কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়, তারা আগে থেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল। আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে, কিছুটা ক্ষমা করে পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের সমাজের মূল ধারায় আনা হয়। এবার আর্লি ইন্টারভেনশনে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা এখনো অপরাধে জড়ায়নি। তবে জড়ানোর ঝুঁকিতে আছে।
পোস্ট ইন্টারভেনশন কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে ৪২১ জন অপরাধীকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে ‘নবদিগন্তের পথে’ কর্মসূচির মাধ্যমে ১৬ জন জঙ্গি এবং সুন্দরবন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪০৫ জন জলদস্যুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, নবজাগরণের আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া এবং বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াস হাতে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়েছে, তাদের সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে। তালিকাভুক্তদের স্বাবলম্বী করতে প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যটননির্ভর পেশা হোটেল-রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয়, ফটোগ্রাফার, ট্যুরিস্ট গাইড, ড্রাইভিংকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো পরিবার স্বাবলম্বী হবে।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি বলেন, নবজাগরণের মাধ্যমে যাদের সমাজের মূল ধারায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাদের কিছু প্রশিক্ষণ র্যাব কর্মকর্তারা সরাসরি দেবেন। এ ক্ষেত্রে র্যাবের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হবে। বাকি প্রশিক্ষণ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেয়া হবে। র্যাবের কর্মপন্থায় যুক্ত হওয়া ‘নবজাগরণ’ সমাজের অপরাধপ্রবণতা কমাতে অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে।
র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নবজাগরণের ব্যাপ্তি পর্যায়ক্রমে বাড়বে। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে গ্রাম্য বৈঠক, কমিউনিটি বেজড নানা কর্মসূচি, সভা-সেমিনার এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে। র্যাবের নতুন এই কার্যক্রমে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য ৪-৫ জন করে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। যাদের নির্বাচিত করেছি, তারা অপরাধের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য আইকন হবে। ঝুঁকিপূর্ণ লোকগুলো বৈধ পেশায় যুক্ত হতে উৎসাহ পাবে।
বাংলাদেশ জার্নাল