প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, প্রবাসী কর্মীরা যা কিছু দেশে পাঠায় সেটি কিন্তু সব খরচ হয়ে যায়। সরকারের অবশ্যই উচিত এবং আমরা চেষ্টা করছি— একটি ম্যাকানিজম তৈরি করতে যেনো তারা নিরাপদ সঞ্চয় করতে পারে। একজন কর্মী যখন ৩-৪ বছর পর দেশে ফিরবে তখন তার একটি নিজের অর্থের জোগান যেনো থাকে এবং তাকে যেনো ব্যাংকে যেতে না হয়। তার যদি নিজের অর্থ থাকে তাহলে তার প্রয়োজন হবে পরামর্শের, যে পরামর্শ তাকে বলবে এই টাকা কিভাবে সে বিনিয়োগ করবে।
বুধবার (২৫ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মাইগ্রেশন পলিসি ডেভেলপমেন্ট (আইসিএমপিডি) আয়োজিত ‘পাবলিক প্রাইভেট সেক্টর পার্টনারশিপ ফর রিইন্টিগ্রেশন ইন বাংলাদেশ (পিপিপি)’ শীর্ষক প্রথম পর্বের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইমরান আহমদ বলেন, এজন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করতে হবে যাতে তারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে এই পরিস্থিতি নাই। এখন কর্মীরা যে টাকা কামায় সেগুলো খরচ করে অনুৎপাদনশীল খাতে। জমি কিনবে, বাড়ি বানাবে। সিলেটে আমার এলাকায় দেখেছি, ধানক্ষেতের মাঝখানে কয়েকতলা বাড়ি, কিন্তু কেউ থাকে না। সবাই লন্ডনে থাকে। এটি অনুৎপাদনশীল খরচ। আমার ভাবতে হবে যে, কিভাবে আমরা মানুষকে পথ দেখাবো যে টাকা উৎপাদনশীল খাতে কিভাবে বিনিয়োগ করবে। আমরা যদি পথ দেখাই তাহলে তাদের জন্য কিছু করা হবে যার বিপরীতে অভিবাসী কর্মীরা আমাদের জন্য করছে।
জুনের মধ্যে এই অর্থবছরে ১০ লাখ কর্মী বিদেশ যাবে বলে আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, গত বছর অভিবাসী কর্মীরা ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এই অর্থবছর আমরা একটু পিছিয়ে আছি। হয়তো ২১-২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসবে। এটা করোনার কারণেই হয়তো। এটাও সত্যি যে করোনার মধ্যে অনেক অভিবাসী কর্মী ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সব কিছুরই একটি ইতিবাচক দিক আছে। এই অর্থবছর ইনশাল্লাহ জুনের মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশ যাবে। ইতোমধ্যে আমরা সাড়ে ৮ লাখ কর্মী পাঠিয়েছি। তারা রেমিট্যান্স পাঠাবে আমাদের, তবে একটু সময় দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি অভিবাসী কর্মীদের দেশের প্রতি একটা প্রতিশ্রুতি আছে। তাদের কারণেই আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের দেশের রেমিট্যান্স কিংবা বৈদেশিক মুদ্রার জোগান যদি ভালো না হতো মেগা প্রকল্পগুলো দাঁড়াতে পারতো না।
এসময় তিনি বিদেশ থেকে আগত অভিবাসীদের কল্যাণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বাংলাদেশে এই প্রথম সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক যৌথ ‘প্লাটফর্ম’ তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি সহযোগী সংস্থা ইউরোপিয়ান রিটার্ন অ্যান্ড রি-ইন্টিগ্রেশন নেটওয়ার্ক (ইআরআরআইএন)ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা আইসিএমপিডি এবং দাতা সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলো সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদেশ ফেরত বাংলাদেশিদের ভাগ্যোন্নয়নে তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে আগত বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা বিদেশ ফেরত বাংলাদেশিদের সফল পুনরেকত্রীকরণের জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার অভিমত ব্যক্ত করেন। অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম (এনডিসি), ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, আইসিএমপিডি’র সিল্ক রুট রিজিওনের প্রধান সেডেফ ডিয়ারিং, ইআরআরআইএন’র প্রজেক্ট ম্যানেজার মারিয়ান উলব্রিচট এবং আইসিএমপিডি’র বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ক্যাপ্টেন (অব.) ইকরাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।