দেশের সব অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তায় ১১ দফা নির্দেশনা এসেছে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছ থেকে। এসব নির্দেশনার মধ্যে আছে অধস্তন আদালতের সীমানা প্রাচীর সুসংহত করা; আদালতের ভেতরে-বাইরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন; প্রহরী দিয়ে সার্বক্ষণিক পাহারা ও বিচারিক কাজের সময় পর্যাপ্ত পুলিশ প্রহরা নিশ্চিত করা।
আজ সোমবার হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমানের স্বাক্ষরে দেশের সব অধস্তন আদালতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনার উল্লেখ রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘খুলনা, পিরোজপুর বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের অনভিপ্রেত ঘটসনার সঙ্গে এ বিজ্ঞপ্তির কোনো সম্পর্ক নাই। আদালতের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়মিতই তদারকি করা হয়। সে ধারাবাহিকতায় এসব নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধান বিচারপতি।’
অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রধান বিচারপতির উদ্বেগের কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রত্যেক আদালতের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর আগে সুপ্রিম কোর্ট থেকে একাধিকবার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, অধস্তন দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমাসমূহের নথিতে বিচারপ্রার্থী জনগণের মূল দলিল-ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র থাকে। আদালতের হেফাজতে থাকা এসব দলিলাদি ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি-নষ্ট হলে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিম্নোক্ত নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
নির্দেশনাগুলো হলো- (ক) আদালত ও বিচারকগণের বাসভবনের সীমানা প্রাচীর সুসংহত করা। (খ) আদালত ও ট্রাইব্যুনালের এখলাস, বিভাগ, প্রতিটি ফটক ও আদালতের বাহিরে সিসিটিভি স্থাপন করা। (গ) আদালত ভবনের বাইরে ও ভিতরে নিরাপত্তা প্রহরী দ্বারা সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়া। (ঘ) আদালত ভবনের দরজা ও জানালাগুলি গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা; করে দিল আরো মজবুত করা এবং ভঙ্গুর দরজা ও জানালাগুলি নতুন করে স্থাপন করা। (ঙ) আদালত চত্ত্বরে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা। (চ) মামলা সংশ্লিষ্ট নথিপত্রের নিরাপদ সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা। (ছ) ব্যবহারের নিমিত্ত মানসম্মত ফার্নিচার-লকার নিশ্চিত করা। (জ) আদালত সীমানার চারিদিকে সিকিউরিটি পোস্ট স্থাপন করা। (ঝ) জরুরি ভিত্তিতে সারাদেশের আদালত এলাকায় রাতে সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল জোরদার করা। (ঞ) অবকাশকালীন সময়ে আদালত ভবনের বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। (ট) প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনালের কর্মকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা।
এসব নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করে দেশের প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
গত বছর ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে অশোভন-অভব্য আচরণের পর পিরোজপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) আবু জাফর মো. নোমানের বিচারিক কাজে বাধা ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে আইনজীবী নেতাদের বিরুদ্ধে। এ দুই ঘটনায় উচ্চ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পান তারা। এ দুই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে গালাগাল ও তার সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ আসে প্রধান বিচারপতির দপ্তরে।
পরে সে অভিযোগ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদালতে পাঠালে গত ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ রয়েছে।