অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, চলতি ২০২২-২৩ করবর্ষে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দেশের ৫৪ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দেয়নি। রোববার সংসদের বৈঠকে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বগুড়া-৫ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
অর্থমন্ত্রী জানান, আয়কর অনুবিভাগে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আয়কর অফিস না থাকা কাঙ্খিত হারে আয়কর রিটার্ন না পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিদ্যমান আয়কর আইন এবং ই-টিআইএন নিবন্ধন সিস্টেমে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় করদাতাদের তথ্য পৃথকভাবে সংরক্ষণের সুযোগ নেই। এ কারণে প্রকৃত রিটার্ন দাখিল করার যোগ্য করদাতার সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয় না।
১২১টি মানিলন্ডারিং মামলা
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাগুলো গত পাঁচ অর্থ বছরে (২০১৭-২০২২) মোট ১২১টি মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করেছে।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ অর্থবছরে বিএফআইইউ কর্তৃক গৃহীত ২৪ হাজার ৯৭৭টি সন্দেহজনক লেনদেন বা কার্যক্রম মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের সংশ্লিষ্টতা বিবেচনায় এক হাজার ২টি গোয়েন্দা প্রতিবেদন আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় পাঠানো হয়েছে।
নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদকে জানান, ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং আইন সংশোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত মানি লন্ডরিংয়ের অভিযোগে শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগে ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ৩৬৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যক্তি পর্যায়ে করদাতা ৮৯ লাখ
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি মাসের ৬ জুন পর্যন্ত বর্তমানে দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে করদাতা ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩৬ জন। সরকার করদাতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। এরমধ্যে রয়েছে জরিপের মাধ্যমে নতুন করদাতা শনাক্তকরণ, এক পাতার রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজীকরণ, তাৎক্ষণিক হিসাব নিরূপণ, অনলাইন ই-রিটার্ন দাখিল, আয়কর প্রদান সহজীকরণ, যেমন-অনলাইনে আয়কর প্রদানের জন্য এ চালান, রকেট, নগদ, বিকাশ এবং সোনালি ব্যাংক ই-পেমেন্টের মাধ্যমে আয়কর পরিশোধ ব্যবস্থা চালু ও করদাতাদের সম্মাননা প্রদান।
তফসিলি ব্যাংকের মূলঋণ (আসল) মওকুফ করার সুযোগ নেই
জাতীয় পার্টির সংসদ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, তফসিলি ব্যাংকের মূলঋণ (আসল) মওকুফ করার সুযোগ নেই। তফসিলভুক্ত রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৬টি ব্যাংক (অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসি) এবং ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) রয়েছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ২০২২ সালে ৪ হাজার ৬২১ জন গ্রাহকের অনুকূলে ৮ হাজার ৪০৪ কোটি ৫২ লাখ টাকার সুদ মওকুফ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ২০২২ সালে এসব ব্যাংকের ১ হাজার ৬২০ কোটি ৮৩ কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের সুদ মওকুফ সংক্রান্ত সুবিধার সঙ্গে কোনো ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার সম্পর্ক নেই।
সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেই
কুড়িগ্রাম ২ আসনের পনির উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের সুবিধায় জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।