আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালন হচ্ছে কি-না তা জানাতে নিবন্ধিত ৩৯ দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চিঠিতে দলগুলোর কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে অফিস, নির্বাচিত কমিটি ও সবস্তরে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে কি-না তার হালনাগাদ তথ্য চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
৩০ কার্যদিবস অর্থাৎ ২৪ নভেম্বরের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ইসির এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ১৬টি দল জবাব দেয়নি। জবাব দেওয়ার জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করেছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৯টি দল জবাব দিয়েছে। আর জবাব দেওয়ার জন্য চারটি দল সময় চেয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির উপসচিব মো. আব্দুল হালিম খান বলেন, নিবন্ধিত দলগুলো শর্ত মানছে কি-না তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ২০টির মতো দলের জবাব পেয়েছি। এরমধ্যে কয়েকটি দল সময় চেয়েছে। প্রাপ্তিজারি শাখায় আরও কোনো দল জমা দিয়েছে কি-না বলতে পারছি না।
বাকি দলগুলোর জন্য সময় বাড়ানো হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কমিশনের কাছে এ বিষয়টি উপস্থাপন করবো। কমিশন দেখে সময় বাড়াবে কি-না তা বিবেচনা করবেন।
কোনো দল শর্ত প্রতিপালন না করলে কমিশন চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। অতীতে কয়েকটি দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার রেকর্ড আছে বলেও জানান তিনি।
ইসির জবাব দেওয়ার দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বি জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, মুক্তিজোট, গণফোরাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি জেপি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।
সময় চেয়েছে যে চার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
২০০৮ সাল থেকে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর পর ৪৪টি দল নিবন্ধন পায়। এরমধ্যে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় বর্তমানে নিবন্ধিত রয়েছে ৩৯টি দল।
শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধন পেলেও স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদালত অবৈধ ঘোষণা করে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গেজেট প্রকাশ; তাতে বলা হয়, আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় আরপিও অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হলো।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন না করায় ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন এবং ভোটের পরে ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি, ২০২১ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।
ফেরদৌস কোরেশীর দল পিডিপির মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর এবং জেলা ও উপজেলা দপ্তরের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা পায়নি কমিশন।
শফিউল আলম প্রধানের জাগপার পক্ষ থেকে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, এক তৃতীয়াংশ জেলা, ১০০ উপজেলা/থানায় তাদের কোনো দলীয় কার্যালয় নেই। ১০০টি উপজেলায় ২০০ জন ভোটার সদস্যও তাদের নেই। আর কাজী ফারুকের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের কাছে কমিশন যেসব তথ্য চেয়েছিল তা দিতেও ব্যর্থ হয় দলটি।