চাঁদপুর ডেস্ক ।। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম, অবৈধভাবে পদ্মা-মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনসহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান দলীয় পদ হারাতে পারেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যান পদ থেকেও তিনি ছিটকে পড়তে পারেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেলিম খানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুই ধরনের শাস্তিই হতে পারে। ইতোমধ্যে তাকে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আনতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ থেকে দলের কেন্দ্রে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদিকে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলনের বিষয়টি তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিটিও হয়েছে। সেলিম খানের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগে বিব্রত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, সেলিম খানকে ঘিরে চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার চাঁদপুর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বৈঠক হয়। এ দুদিন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি মূল এজেন্ডায় ছিল চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ তার প্রশ্রয়দাতাদের বিষয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা বৈঠকে অবৈধ পন্থায় পদ্ম-মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কীভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন চেয়ারম্যান জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে যান এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন একজন কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি বলেন, কার প্রশ্রয়ে দিনের পর দিন তিনি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখছেন, এ বিষয়টি জানা জরুরি। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা আমাদের সময়কে বলেন, টানা দুদিনের বৈঠকে চাঁদপুরে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে কথা হয়। সম্মেলন শুরু হবে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে। যতদ্রুত সম্ভব সম্মেলনের দিন তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
সেই সম্মেলনের মাধ্যমেই দলীয় পদ হারাতে পারেন সেলিম খান। তবে এর আগে তাকে কেন্দ্র করে চলমান মামলা তার বিপরীতে গেলে প্রশাসনিক শাস্তিও হতে পারে। দুদিনের বৈঠকে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দীন আহম্মদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম পাটোয়ারী দুলাল, চাঁদপুর-৪ আসনের এমপি শফিকুর রহমান, চাঁদপুর-২ আসনের এমপি নুরুল আমিন রুহুল প্রমুখ। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আমাদের সময়কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
আইনগত ও রাজনৈতিক সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে মন্ত্রণালয় ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে ২ মার্চ উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (খাসজমি) জহুরুল হককে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (আইন-২) আবুল কালাম তালুকদার ও উপসচিব কবির মাহমুদ (অধিগ্রহণ-১) এবং চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। এ অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে যারা থাকবে, যাদের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারা দলে থাকতে পারে না। তাই তাদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়েছে। সূত্র (দৈনিক আমাদের সময়)