এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আগামী সাত দিন বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কাল রোববার থেকে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। ১০ অঞ্চলে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই অভিযান পরিচালনা করবেন।
তিনি বলেন, বিশেষ এই অভিযানে যেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে, সেখানেই জরিমানা করা হবে। কোনো ভবন বা স্থাপনার মালিক কিংবা প্রতিনিধি না থাকলে নিয়মিত মামলা দেয়া হবে।
শনিবার সকালে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি পরিচালিত বিশেষ অভিযানে মেয়র এসব কথা বলেন।
ঢাকা উত্তর সিটির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের আজমপুরের ফরিদ মার্কেট, মুন্সি মার্কেট, আফজাল সরণি, বায়তুল ফালাহ মসজিদ রোড, জনাব আলী সড়ক এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
মেয়র বলেন, ‘এই মশা বাসাবাড়িতে, আশপাশের আঙিনায়, ছাদবাগানে অব্যবহৃত কোনো টায়ার, মাটির পাত্র, রঙের কৌটা, ফুলের টব কিংবা ডাবের খোসায় জমে থাকা পানিতে প্রজনন ও বংশ বিস্তার করে।’
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে এই মশা নিধনে আমরা চেষ্টা করছি। নগরবাসীরা সচেতন হয়ে নিজ নিজ বাসাবাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রেখে, কোথাও পানি জমে থাকতে না দিয়ে এডিস মশাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নগরবাসী সবার সহযোগিতায় যেভাবে ১২ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য পরিষ্কার করা সম্ভব হয়েছিল, ঠিক একইভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণেও এগিয়ে আসতে হবে।’
নির্মাণাধীন ভবনের মালিক ও ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুঁশিয়ার করে মেয়র বলেন, অনেকেই এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিন্দাস। তারা ভাবছেন, কেউ তো আসবে না, অভিযান করবে না। সবাইকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আমরা কিন্তু প্রতিটি এলাকায় যাচ্ছি। ড্রোনের মাধ্যমেও বাসাবাড়ির ছাদবাগান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
‘তিন দিনে এক দিন; জমা পানি ফেলে দিন’—সিটি করপোরেশনের এই স্লোগান স্মরণ করিয়ে দিয়ে মেয়র বলেন, ‘আপনারা জানেন, এলাকায় কিংবা বাড়ির আশপাশে কোথায় এডিস মশার প্রজননের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। সেসব বিষয় “সবার ঢাকা অ্যাপ”-এর মাধ্যমে আমাদের জানান। এ ছাড়া সরাসরি হটলাইনের মাধ্যমেও অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। ঘরের মধ্যে লার্ভার চাষ করে কেউ অপরাধী হবেন না; বরং নিজ নিজ বাসাবাড়ি ও আঙিনা পরিষ্কার রেখে পুরস্কৃত হোন।
মেয়রের উপস্থিতিতে বায়তুল ফালাহ মসজিদ সড়ক এলাকায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সরকার প্রোপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নির্মাণাধীন একটি ভবনে প্রচুর এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। পরে ডিএনসিসি অঞ্চল-১-এর নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়ন ওই প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন। জরিমানার টাকা অনাদায়ে ছয় মাসের জেল দেয়া হয়েছে।
আজমপুর এলাকায় মশকনিধন ও সচেতনতা অভিযান শেষে মেয়র রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জনসাধারণকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন এবং নিজে মাইকিং করে সচেতন করেন।
নিকুঞ্জ এলাকায় অভিযানকালে দুটি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। বাড়ি দুটির মালিক বিদেশে অবস্থান করায় খিলক্ষেত থানায় দুটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযানে অন্যদের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডি এম শামিম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসহাক মিয়া, নারী কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী ও জাকিয়া সুলতানা এবং নিকুঞ্জ-১ কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।