আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিতে যশোরবাসীর কাছে ওয়াদা চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাত তুলে ওয়াদা করতে বললে উপস্থিত জনগণ হাত তুলে ওয়াদা করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোরের শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামের জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনগণের থেকে এ ওয়াদা নেন।
জনসভায় উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আগামী নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার সেবা করার সুযোগ দেবেন।’
মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিন। সেবা করার সুযোগ চাই। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে পাশে থাকতে হবে। আমরা শান্তি চাই, উন্নতি চাই। প্রত্যেকটা জায়গায় দেশ এগিয়ে যাক, সেটিই প্রত্যাশা। যতদিন বেঁচে আছি, দেশের জন্য কাজ করে যাব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির কাজই হচ্ছে গুজব ছড়ানো। তাই আপনারা গুজবে কান দেবেন না। আমাদের এখনো পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে। যেটুকু খরচ হয়েছে, তা মানুষের উন্নয়নেই খরচ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে আজকে অর্থনৈতিক মন্দা। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা অর্থনীতিকে এখনো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমি দেখি, কেউ কেউ রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নাই। অনেকে বলে ব্যাংকে টাকা নাই, কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তোলে। ব্যাংকের টাকা তুলে ঘরে রাখলে তো চোরে নিয়ে যাবে। চোরের জন্য সুযোগ করে দেওয়া। ব্যাংকে টাকা নেই এ কথাটা মিথ্যা। গতকালও আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরসহ মিটিং করেছি। আমাদের এ বিষয়ে কোনো সমস্যা নাই, প্রত্যেকটা ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যারা জানতে চান রিজার্ভ কোথায় গেল, তাদের বলছি, রিজার্ভ কোথাও যায়নি। মানুষের কাজে লেগেছে। যেহেতু যুদ্ধ লেগেছে, দাম বেড়েছে সবকিছুর। তারপরও আমরা খরচ করছি, আমদানি করছি; যাতে দেশের মানুষের খাদ্যের যেন ঘাটতি না হয়। কারও কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়। এজন্য দেশের সব মানুষকে বলে দিয়েছি, কোনো জমি যাতে খালি রাখা না হয়। পারলে একটা মরিচ গাছ লাগান, একটি টমেটো গাছ লাগান। এটি আমাদের সবার উপকারে আসবে।’
দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। এর আগে, সকাল থেকে যশোরের বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ সমাবেশস্থলে সমবেত হন।
সভা পরিচালনা করছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এমপি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি, মির্জা আযম, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জামাল মহিউদ্দিন, ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
জনসভা উপলক্ষে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামসহ পুরো শহর নিরাপত্তার চাদরে আচ্ছাদিত রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে দিয়েছে। সেই কারণে বিএনপির প্রধান নেতা আজ সাজাপ্রাপ্ত। এই সাজাপ্রাপ্ত নেতা দেশকে কী দিতে পারে বলেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন করেছি। যশোরে আমাদের সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা কৃষকের সব রকম সুযোগ করে দিয়েছি। ১০ টাকায় আজ কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব। এই যশোর থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সর্বপ্রথম এখানে আইটি পার্ক হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রবাসীরাও পর্যাপ্ত রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। বিএনপি মানুষের রক্ত চুষে খেয়েছে আর আওয়ামী লীগ দিয়েছে উন্নয়ন।’
প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যশোর মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুতই সেখানে হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু হবে। আর স্টেডিয়ামের অবস্থা খুব খারাপ। জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এটাকে আমরা ১১ স্তর বিশিষ্ট স্টেডিয়াম করে দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভয়নগরে ইপিজেট করে দিচ্ছে। সেখানে ৫০০ একর জমি নেয়া হয়েছে। সেখানে বহু মানুষের কর্মস্থান হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। যুবসমাজের জন্য আমরা অনেক কিছু করেছি। শুধু চাকরি খুঁজলে হবে না। কর্মস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। জামানত ছাড়া ঋণ পাওয়া যাবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কেউ বেকার থাকবে না। কেউ কিছু না কিছু করতে পারবে। আমরা সেটা করে দিয়েছি।’
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর আজ যশোর এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একই স্টেডিয়ামে সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। তার প্রায় ৫০ বছর পর তারই কন্যা সেখানে ভাষণ দেবেন। এ কারণে এ সমাবেশকে ঐতিহাসিক বলছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।