২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জঘন্য নৃশংসতায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকেরা নির্যাতিত হয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে বিতাড়িত হয়েছিল যা ইতিহাসে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে ভয়াবহ দেশত্যাগ হিসেবে বিবেচিত। রাখাইন রাজ্যে ১৯৭৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক বৈষম্য, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার মত ভয়াবহতার সম্মুখীন হয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৭ সালে ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয় এবং বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয়।
মানবিক বিবেচনায় অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের জন্য রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সরকারের নিকট কৃতজ্ঞ। এছাড়াও খাদ্য,আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তা প্রদানের জন্য তারা জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমূহের নিকট কৃতজ্ঞ। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের নিজের দেশ নয়। তাই রোহিঙ্গাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য স্বদেশে ফিরে যাওয়া এবং রাখাইনে নিজ ভূমিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা।২০১৭-২০১৮ সালে জাতিসংঘ ও চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বেশকিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় কিন্তু এরপর পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ক উল্লেখযোগ্য ও কার্যকর কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। এমনকি বিশ্ব সম্প্রদায়ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরনার্থী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কথা ভুলতে বসেছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০ জুন আন্তর্জাতিক শরনার্থী দিবসকে সামনে রেখে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে কক্সবাজারস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে তাদের দাবি তুলে ধরে।
বর্তমানে রোহিঙ্গারা বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রহীন গোষ্ঠী। ২০১৭ সালে দেশ থেকে বিতাড়নের পাঁচ বছর হয়েছে কিন্তু আর কত দিন তারা উদ্বাস্তু হয়ে থাকবে এই প্রশ্ন তুলেন অনেক রোহিঙ্গারা।
এখন রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আজ ১৯ জুন ২০২২ এ নির্যাতিত রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট নিম্নোক্ত দাবি উত্থাপন করেঃ
দাবি সমূহ –
ক। যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন ও পুনঃএকিভূতকরণ।
খ। মিয়ানমার কর্তৃক বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন অত্যাবশকীয় ভাবে বাতিল করা।
গ। মিয়ানমার কর্তৃক রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন।
ঘ। প্রত্যাবাসনের পরে আইডিপি ক্যাম্পের পরিবর্তে নিজস্ব গ্রামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ।
ঙ। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিকরণ।