বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে পেনাল্টি শ্যুট রুখে দিয়ে নায়ক বনে যান তিনি। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের পরিচয় হয় ‘বাজপাখি’। সেই এমি গতকাল এসেছিলেন ঢাকায়। মাত্র ১১ ঘণ্টার অবস্থান করেছিলেন। দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। গিয়েছেন তাকে নিয়ে আসার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান নেক্সট ভেঞ্চার্স কার্যালয়ে। তবে জন সাধারণের সঙ্গে ছিল না তাকে নিয়ে কোনো আয়োজন।
খাঁচা বন্দি থেকে বিকেলে কলকাতার বিমান ধরেন। সেখানে পৌঁছানো মাত্রই তাকে মেরুন উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। যা দেখে মার্তিনেজ হয়ত ভেবেছিলেন, এখানেও বাংলাদেশের মতোই কাটবে। কিন্তু সীমানা পেরিয়ে যে বাংলাদেশের বাজপাখি ‘মুক্ত’ হবে সেটা তার জানা ছিল না।
আজ বেলা গড়াতেই সেটা টের পেলেন এমি মার্তিনেজ। কলকাতায় তাকে নিয়ে আজ ছিল একাধিক আয়োজন। বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় কলকাতার মিলনমেলায় ‘তাহাদের কথা’ নামে এক আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। যেখানে মার্তিনেজ তার জীবনের অনেক অজানা গল্প বলেছেন দর্শকদের সামনে। এই অনুষ্ঠানে সর্বনিম্ন ৪৯৯ টাকা খরচ করে ‘ডিবু’কে সরাসরি দেখতে পেয়েছেন ভক্তরা। সর্বোচ্চ সোয়া লাখ টাকার টিকেট কেটে যারা গিয়েছিলেন তারা পেয়েছেন এমির স্বাক্ষর করা জার্সি, সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজের সুযোগ। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোহনবাগান ক্লাবের কর্তারা। সেখানে তাকে ‘মোহনবাগান রত্ন’ সম্মাননা দেওয়া হয়।
তাহাদের কথা অনুষ্ঠানেই মার্তিনেজ দেখেছেন দর্শকদের উন্মাদনা কেমন! কিন্তু খেলা যে তখনও বাকি ছিল, সেটা জানতেন না আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী এই গোলকিপার। সেই অনুষ্ঠান শেষে যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন উৎসুক দর্শকরা ভিড় করেন তার গাড়ির সামনে। তাদের চাপে ভেঙে যায় এমিকে বহনকরা গাড়ির কাচ। ভাঙা কাচের গাড়ি নিরাপদ নয় ভেবে কাতারে গোল্ডেন গ্লাভস জয়ীকে ফিরতে হয় পুলিশের গাড়িতে করে।
মার্তিনেজের এশিয়া সফর শুরুর পর এমন দৃশ্য তিনি প্রথমই দেখলেন। তাতে অবশ্য বিব্রত হতে দেখা গেল না তাকে। বরং মুচকি হাসি দিয়ে ফিরেছেন পরের গন্তব্যে। যে দৃশ্যটা তিনি পাননি বাংলাদেশে। সেটারই দেখা পেলেন সীমানা পার হয়ে।
এমি মার্তিনেজ মাঠের ফুটবলার। এখনও তিনি খেলছেন জাতীয় দলের হয়ে। কিন্তু বাংলাদেশে তার সঙ্গে দেখা হয়নি কোনো ফুটবলারের। এমনকি বিমাবন্দরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও জামাল ভূঁইয়া সাক্ষাতের সুযোগ পাননি। এমনকি তাকে নেওয়া হয়নি দেশের কোনো ফুটবল মাঠেও। তবে মাঠের মানুষ মার্তিনেজ কলকাতায় গিয়ে পা রেখেছেন সবুজ গালিচায়।
মোহনবাগানের মাঠে গিয়ে পেলে-ম্যারাডোনা-সোবার্স নামঙ্কিত গেটের উদ্বোধন করেন। তারপর একটি প্রদর্শনী ম্যাচেও দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এই ম্যাচটিতে দর্শকদের জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। ম্যাচের আগে মাত্র ২ ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায় সব টিকেট।
আজকের মতো মার্তিনেজের দিনের সূচি শেষ। তবে রাতে নিশ্চয়ই ঘুমানোর আগে তিনি ঢাকা আর কলকাতার ভালোবাসার বহিঃ প্রকাশের অংক মেলাবেন। যে দেশে তিনি নিজের আগ্রহে এসেছিলেন সেই উপত্যকায় তাকে প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে ‘খাঁচায় বন্দী’ সম্মান। আর সেই মার্তিনেজই আবার কলকাতায় গিয়ে দেখেছেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। সীমানা পেরিয়ে সেখানে যেন ‘মুক্ত’ এক বাজপাখি তিনি।