পাবনায় নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে আরসিসি রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল আলী মাসুদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও বিএডিসি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে রাস্তা নির্মাণের নামে মোটা অংকের অর্থ লুট করা হয়েছে।
বিএডিসি সূত্র জানায়, সম্প্রতি সদর উপজেলার সাদুল্লাহপুর লোহাগড়া হোসেন আলী খাঁর বাড়ির তেমাথা থেকে চক বায়শা (আতাইকুলা– সুজানগর) আর এইচডি পর্যন্ত মোট ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা নির্মাণের কাজ পান ঠিকাদার শেখ রাসেল আলী মাসুদ। এতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪১৮ টাকা। নির্মাণ কাজ শেষে গত ১২ জুন রাস্তাটির উদ্বোধন করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তা উদ্বোধনের দিনেই রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। শিডিউলের তোয়াক্কা না করে ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছেন। জোর করে আশেপাশের মানুষের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তার কাজে লাগিয়েছেন। এ বিষয়ে বিএডিসি কর্মকর্তাদের বারবার বলেও তারা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। বরং ঠিকাদার তার অধীনস্থদের দিয়ে গরিব কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এবং এ বিষয়ে মুখ খুললে অসুবিধা হবে বলে শাসিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সদ্য ঢালাই করা রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। সেগুলো লুকাতে সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। যা খড় ও কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, রাস্তার কাজে দুর্নীতির টাকা বিএডিসি কর্মকতাদের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে ঠিকাদার। উৎকোচ উপঢৌকনের পাশাপাশি বিএডিসি কর্মকর্তাদের খুশি করতে প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকের ছবি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্যানার।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, কাজ শেষ হয়ে গেলেও রাস্তার পাশেই ফসলি জমিতে এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে ইট ও বালুর মত নির্মাণসামগ্রী। এতে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। অন্যদিকে জমি থেকে রাস্তায় ব্যবহারের জন্য তোলা হয়েছে মাটি। নষ্ট করা হয়েছে ফসল। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
মাঠে নিজ জমিতে কাজ করছিলেন স্থানীয় কৃষক নজিমুদ্দিন। সাংবাদিকদের দেখে এগিয়ে এসে বলেন, কয়েক কোটি টাকার রাস্তা এটি। দীর্ঘদিন আমরা একটি রাস্তা চাচ্ছিলাম। যেনো ফসলগুলো আরামে আনা নেওয়া করতে পারি। কিন্তু দুই নম্বর ইট, বালু দিয়ে যে রাস্তা করা হয়েছে, তাতে এই রাস্তা কয়দিন টিকবে বলা মুশকিল।
লোহাগড়া গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ আবুল মালিথা জানান, এই রাস্তাকে খেতে দেওয়া হয় নাই (ভালোমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে করা হয়নি), তাই এখনই ফেটে হা হয়ে আছে। এগুলো সরকারি (ইঞ্জিনিয়ার) লোকেরা দেখে না?
কাজে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার শেখ রাসেল আলী মাসুদ। তিনি বলেন, বিএডিসির তত্ত্বাবধানে শিডিউল অনুুযায়ী কাজ হয়েছে। দুয়েকটা জায়গায় আবহাওয়াগত কারণে ফাটল হলেও তা সংস্কার করা হয়েছে।
ব্যানারে বিএডিসি কর্মকর্তাদের ছবি ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্মান জানাতে প্রকল্প এলাকায় তাদের (বিএডিসি কর্মকর্তা) ছবিযুক্ত ব্যানার টানানো হয়েছে।
কাজের মান ঠিক আছে বলে দাবি করেছেন বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদও। তিনি বলেন, নির্মাণ কাজ পরীক্ষায় তেমন কোন ত্রুটি ধরা পড়েনি।
উদ্বোধনের দিনেই রাস্তায় ফাটল ধরলো কিভাবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এলাকাবাসী অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএডিসি কর্মকর্তাদের ছবিযুক্ত ব্যানার টানানো ঠিকাদারের উচিৎ হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।