নিজস্ব প্রতিবেদক মোঃ এরশাদ হোসেন চৌধুরী।
কক্সবাজার কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ গেইটের বিপরীতে মঞ্ছুর কমপ্লেক্সের নিচ তলায় একটি কম্পিউটারের দোকানে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে তৈরীকৃত বিপুল পরিমাণ জাল টাকা, জাল টাকা তৈরীর সরঞ্জামাদিসহ জাল টাকা তৈরির মূলহোতা সাইফুদ্দিন ও তার তিন সহযোগীকে আটক করেছে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম।
রবিবার(২৭ মার্চ ২০২২ ইংরেজী) র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজার কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ গেইটের বিপরীতে মঞ্ছুর কমপ্লেক্সের নিচ তলায় একটি কম্পিউটারের দোকানে অভিযান চালিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকা তৈরির প্রধান হোতা সাইফুদ্দিন (২৫)ও তার তিন সহযোগী সাইফুল ইসলাম (২৪)মোঃ মিসবাহ্ উদ্দিন (৩২)মোঃ জিয়াউদ্দিন (২০)কে গ্রেফতার এবং তাদের হেফাজতে থাকা বিপুল পরিমান বাংলাদেশী জাল নোট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহৃত থিংকপ্যাড, ল্যাপটপ, নোটপ্যাড, এলইডি মনিটর, কালার প্রিন্টার, ফটোকপি প্রিন্টার ও অন্যান্য আরও অনেক সরঞ্জামাদি এবং ১’হাজার টাকার জাল নোট সম্বলিত ১৬ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৭ চট্টগ্রাম’র উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ মোস্তাফা জামান সোমবার সকালে প্রেস ব্রিপিং করে সাংবাদিকদের জানান র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, র্দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি জানান গত কয়েক দিন যাবৎ র্যাব-৭ চট্টগ্রাম বরাবর অভিযোগ গৃহিত হয় যে, কতিপয় প্রতারক চক্র দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চল বেছে নিয়ে বাংলাদেশী জাল টাকা তৈরী করে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় আসল টাকা বলে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারনা করে আসছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম উল্লেখিত জাল নোট তৈরীর সাথে জড়িত প্রতারক চক্রকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ ২০২২ইং তারিখ র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি যে, কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানাধীন কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ গেইটের বিপরীতে মঞ্জুর কমপ্লেক্সের নিচ তলায় একটি কম্পিউটারের দোকানের ভিতর সংঘবদ্ধ একটি অপরাধ চক্র বাংলাদেশী জাল নোট তৈরী করছে এবং এই চক্রটি ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সু-কৌশলে জাল টাকাগুলো বাজারে ছেড়ে ব্যাপক প্রতারনা করে আসছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৭ মার্চ ২০২২ইং তারিখ ৪.১৫ মিনিটে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। মোঃ ছাইফুদ্দীন আহাম্মদ প্রকাশ মিজান (২৫)সাইফুল ইসলাম (২৪) মোঃ মিসবাহ্ উদ্দিন (৩২) এবং মোঃ জিয়াউদ্দিন (২০)কে ঘটনাস্থল থেকে অবৈধ জাল নোট প্রস্তুত করা অবস্থায় আটক করে। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে সকলেই অকপটে স্বীকার করে যে, তারা সংঘবদ্ধ একটি জাল টাকা প্রস্তুতকারক চক্রের সাথে জড়িত মর্মে তাদের হেফাজতে থাকা বিপুল পরিমান বাংলাদেশী জাল নোট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহৃত থিংকপ্যাড, ল্যাপটপ, নোটপ্যাড, এলইডি মনিটর, কালার প্রিন্টার, ফটোকপি প্রিন্টার ও অন্যান্য আরও অনেক সরঞ্জামাদি এবং ১হাজার টাকার জাল নোট সম্বলিত ১৬ লক্ষ টাকা উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো জানান ঘটনার প্রতিপৃষ্ঠে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা সবাই একটি সংগঠিত জাল নোট তৈরি সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ অসৎ উপায় অবলম্বন করে সকলের অগোচরে ও শহর এলাকায় বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অধিক তৎপর থাকায় তারা নিভৃত একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে কুতুবদিয়া নামক স্থানটিকে জাল টাকা ছাপানোর জন্য নির্বাচন করেছে। মোঃ সাইফুদ্দীন আহাম্মদ প্রকাশ মিজান এই অবৈধ জাল নোট সিন্ডিকেটের মূলহোতা ও সাইফুল ইসলাম কম্পিউটার বা ল্যাপটপে জাল টাকা গুলো প্রস্তুত করে কালার প্রিন্টারে প্রিন্ট করতো, মিসবাহ্ উদ্দিন জাল টাকাগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় আসল টাকা হিসেবে তাদের চক্রের নির্ধারিত লোকের মাধ্যমে চালানোর ব্যবস্থা গ্রহন করতো মোঃ জিয়াউদ্দিন জাল টাকা প্রস্তুতকালীন সময়ে বর্ণিত স্থানে দোকানের দরজায় পাহাড়ায় নিয়োজিত থাকতো যাতে কেউ তাদের এই অবৈধ জাল টাকা তৈরীর কাজ সম্পর্কে জানতে না পারে। টাকা ছাপানোর পর তাদের চক্রের নির্ধারিত লোকের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জাল টাকা গুলোকে সু-কৌশলে চালানো হতো।
উল্লেখ্য যে, আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতরকে উপলক্ষ্য করে মানুষের ক্রয়-বিক্রয় পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগে তাদের প্রস্তুতকৃত জাল টাকা গুলো মানুষের মাঝে আসল টাকা হিসেবে চালিয়ে জনগণকে ফাঁকি দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনই ছিলো তাদের মূল লক্ষ্য। এছাড়াও আরো জানা যায়, তারা এই জাল টাকা ব্যবহার করে মায়ানমার থেকে অবৈধ পথে মাদকদ্রব্য এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করতো বলে অকপটে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত আলামত সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।