জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তার ন্যায়সঙ্গত সমাধানের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য নিরাপত্তা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা । বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব কমাতে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন এবং সেগুলি এখনই প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ এর উদ্বোধনী অধিবেশনে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, কার্বন নিঃসরন কমাতে প্রতিটি জাতিরই একটি ভুমিকা রয়েছে। উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত অতিরিক্ত সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
এটাকে বৈশ্বিক সমস্যা দাবি করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি আশা করি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ঐতিহাসিকভাবে উচ্চ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরনকারী, বহুজাতিক সংস্থা, উন্নয়ন অংশীদার, বিজ্ঞানী, মিডিয়া, নীতি নির্ধারক এবং সুশীল সমাজ এই ক্ষতি মোকাবেলায় সহায়তা প্রদানের জন্য এগিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, কথাকে কাজে পরিণত করতে হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অবশ্যই ব্যাপক ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যার জন্য একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সীমানা নেই।
তিনি বলেন, কর্মপন্থা বাস্তবায়ন বিলম্বিত করা যাবে না। সান্তনামূলক প্রতিশ্রুতি, বড় বড় বক্তৃতা, আকর্ষণীয় স্লোগান এবং উল্লেখযোগ্য কাগজপত্রের উপস্থাপনা সমস্যা প্রশমনের জন্য যথেষ্ট নয়।
রাষ্ট্রপতি গবেষক, বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উচ্চ ফলনশীল, বন্যা, খরা এবং লবণাক্ততা-সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণাকে আরো এগিয়ে নেয়ারও তাগিদ দেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, যথাযথ অভিযোজন কৌশল গ্রহণের জন্য গবেষণা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ বিশেষ করে, উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসাতে উৎসাহিত করেছে বলেও তিনি জানান। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ তার স্থলভাগের এক তৃতীয়াংশ হারাতে পারে। মালদ্বীপ সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। ভারত ও পাকিস্তানের বন্যার সমভূমি স্থায়ীভাবে প্লাবিত হতে পারে, যার ফলে এই অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ লোক বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ এক কোটি গাছ লাগানোর কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পানি সম্পদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাব্য প্রভাব প্রশমিত করতে সরকার ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশের আবাসস্থল, দক্ষিণ এশিয়া বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, কিন্তু পানি দূষণ, বাঁধ নির্মাণ এবং উজান থেকে পানি সরানোর কারণে খরা, আকস্মিক বন্যা এবং ভাটির দিকে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আগামী বছরগুলোতে এই অঞ্চলে বসবাসকারী লোকেরা যে কারনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, তা হল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হুমকি। ভৌগোলিক অবস্থান ও ভত¦াত্বিক গঠন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী তীব্র আবহাওয়ার পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ জলবায়ুগত মারাত্মক পরিণতির সম্মুখীন হতে পাওে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অসময়ের বৃষ্টি, হিমালয়ের হিমবাহের দ্রুত গলন এবং শুষ্ক মৌসুমে উচ্চ তাপমাত্রাজনিত খরার কারণে আকস্মিক বন্যার ফলে হুমকির মুখে পড়লেও বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহের অনেক উন্নতি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ পেট্রি তালাস, সিসিএফএস সদস্য ড. থিয়েরি হিউলিন, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডগলাস সিম্পন এবং ঢাবি প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সূত্র: বাসস