গাছ, সোনা, রূপা, গবাদি পশু, গাড়ি, মাছ ও আসবাবপত্রের মতো অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করছে সরকার। এ জন্য ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে তোলেন। বিলটি পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, স্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে এখন ঋণ নেওয়া যায়, তাতেই ব্যাংকগুলো লুট পাটের আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ নেওয়ার বিধান করা হলে তা বিপর্যয় ডেকে আনবে।
যেসব সম্পত্তি জামানত রাখা যাবে
বিলে জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তি নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে রপ্তানির উদ্দেশ্যে অথবা রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুতের কাঁচামাল। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত স্থায়ী আমানতের সনদ। স্বর্ণ, রৌপ্য এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু, যার ওজন ও বিশুদ্ধতার মান স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সত্যায়িত। নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সনদ। স্বীকৃত মেধা স্বত্ব পণ্য।
মৎস্য, গবাদি পশু, দণ্ডায়মান বৃক্ষ ও শস্যাদি, ফলদ উদ্ভিদ ও ঔষধি উদ্ভিদ। আসবাব, ইলেকট্রনিক পণ্য, সফটওয়্যার ও অ্যাপস, যার মূল্য প্রাক্কলন করা সম্ভব। কোনো সেবার প্রতিশ্রুতি, যার বিপরীতে সেবা গ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃত প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক যানবাহন। যথাযথভাবে সংরক্ষিত কৃষিজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত মৎস্য বা জলজ প্রাণী, বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিলে বর্ণিত রক্ষিত বন্য প্রাণী ও উভচর ছাড়া কোনো আয় বর্ধক জীবজন্তু (অজাত শাবকসহ)। সুরক্ষা স্বার্থ সৃষ্টিকারী যেকোনো ধরনের চুক্তি, বন্ধক, শর্ত সাপেক্ষে বিক্রয়, ডিবেঞ্চার, কিস্তিতে ক্রয় চুক্তি।
বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত এক বছরের অধিক মেয়াদি কোনো ইজারা। সড়ক পরিবহন আইনের অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত কোনো মোটরযান। কোনো বার্ষিক ভাতা বা বিমা পলিসির অধীন সৃষ্ট কোনো স্বার্থ বা দাবি এবং জামানতের কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা লোকসান থেকে উদ্ভূত ক্ষতিপূরণ বা ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা হিসেবে কোনো বিমা পলিসির অধীন প্রাপ্য অর্থ বা অন্য কোনো আর্থিক অধিকার।
বিলে বলা হয়েছে, অর্থ ঋণ আদালতে সংজ্ঞায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা আইন অনুযায়ী বিমাকারী, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইনে সংজ্ঞায়িত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এবং মানি ল্যান্ডার্স অ্যাক্টে সংজ্ঞায়িত মানি লেন্ডার এবং বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে লেনদেন করতে পারবে।
এতে আরও বলা হয়, সুরক্ষা স্বার্থ সৃষ্টির ক্ষেত্রে জামানত হিসাবে ব্যবহারযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য প্রবিধান দিয়ে নির্ধারিত হবে।
আইনটি কার্যকর হলে সরকার একটি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে। এই কর্তৃপক্ষ জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণী নিবন্ধন, জামানত হিসাবে অস্থাবর সম্পত্তির ইলেকট্রনিক নিবন্ধন সংক্রান্ত ইলেকট্রনিক তথ্যভাণ্ডার পরিচালনা করবে।