ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, হাইতিতে বিশৃঙ্খলা এবং মেক্সিকোতে অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে কাজ করতে গিয়ে ২০২২ সালে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্টস (আইএফজে) এর একটি নতুন প্রতিবেদন এই তথ্য জানিয়েছে।
ব্রাসেলস-ভিত্তিক সংস্থা আইএফজে, যা ১৪০ টিরও বেশি দেশে ট্রেড ইউনিয়ন এবং অ্যাসোসিয়েশনের ৬ লাখ সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মীর প্রতিনিধিত্ব করে।
শুক্রবার আইএফজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বছর এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৬৭ জন সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মী নিহত হয়েছে, যা ২০২১ সালে ৪৭ জন ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বছর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ইউক্রেনে যুদ্ধ কভার করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি মিডিয়া কর্মী নিহত হয়েছে। আইএফজের তথ্য মতে এই সংখ্যা, মোট ১২ জন। তাদের বেশিরভাগই ছিল ইউক্রেনীয় সাংবাদিক কিন্তু বেশ কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিকও মারা গিয়েছিলেন, যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহগুলোতেই বেশিরভাগ সাংবাদিকের মৃত্যু ঘটেছিল।
আইএফজে আরও বলেছে মেক্সিকোতে অপরাধমূলক সংগঠনের সন্ত্রাসের শাসন এবং হাইতিতে আইন-শৃঙ্খলার ভাঙ্গনও হত্যাকাণ্ডের বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। ২০২২ সালে মেক্সিকোতে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক ছিল, যা যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে সাংবাদিকদের জন্য এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও পাকিস্তানে এই বছরের রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও পাঁচজন সাংবাদিকের মৃত্যুর রেকর্ড করেছে ৷ সংস্থাটি কলম্বিয়ার সাংবাদিকদের জন্য নতুন হুমকি এবং ফিলিপাইনে সাংবাদিকদের জন্য অব্যাহত বিপদের বিষয়ে সতর্ক করেছে।
আইএফজের রিপোর্টে আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহের মারাত্মক গুলি করার কথাও বলা হয়েছে। যিনি গত ১১ মে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হন যখন তিনি উত্তর অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কভার করছিলেন। আল জাজিরা নেটওয়ার্ক এই সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে আবু আকলেহকে হত্যার জন্য দায়ীদের তদন্ত ও বিচারের জন্য অনুরোধ করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আরও দেখায় যে ২০২২ সালে রাজনৈতিক দমন-পীড়নে অনেক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের শিকার ও কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আইএফজের তথ্যানুসারে কমপক্ষে ৩৭৫ জন সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মী বর্তমানে তাদের কাজ করার জন্য কারাগারে রয়েছে। কারাবন্দিদের বেশির ভাগই চীন, মিয়ানমার, তুরস্ক, ইরান ও বেলারুশের।
আইএফজের সাধারণ সম্পাদক অ্যান্থনি বেলাঞ্জার এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিডিয়া কর্মীদের হত্যার সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএফজে। পাশাপাশি যেকোনও দেশের সরকারকে সাংবাদিকদের পাশাপাশি মিডিয়ার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইএফজের এবং অন্যান্য মিডিয়া অধিকার গোষ্ঠীগুলো।
সূত্র: আলজাজিরা