জাবি প্রতিনিধি-আসিবুল ইসলাম রিফাত
চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন এবং তাদের দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় চা শ্রমিকদের বর্তমান ১২০ টাকা বেতনকে ‘অমানবিক ও জুলুম’ বলে আখ্যা দেন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা বলেন, ‘চা ‘ দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পণ্য। সিলেটের সবুজে ঘেরা নয়নাভিরাম চা বাগানের দৃশ্য দেখে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, অথচ এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে চা-শ্রমিকরা দিনরাত অমানবিক পরিশ্রম করে যাচ্ছে, তাদের খোঁজ খবর আমরা জানি না।’ নামীদামী ব্র্যান্ডের চা খেয়ে আমরা যারা আমাদের প্রাত্যহিক সকালের যাত্রা শুরু করি এবং সেইসাথে সজীবতার নিঃশ্বাস নেই তারা কয়জনই বা জানি এসকল মানুষদের নিষ্পেষিত জীবনব্যবস্থার কথা। চা গাছ ছেঁটে ছেঁটে ২৬ ইঞ্চির বেশি যেমন বাড়তে দেওয়া হয় না তেমনি বাড়তে দেওয়া হয় না লেবার লাইনে চা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দকৃত ২২২ বর্গফুটের অর্থাৎ ৮ হাত নাই ১২ হাতের ছাউনিকেও। বাস্তবিক অর্থে যারা চা শ্রমিকের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখেছেন তারাই কেবল বলতে পারবেন চা বাগানে সবুজের ছায়াঘেরা ভাণ্ডারে কতটা অমানবিক ও বর্বর জীবন কাটাতে হয় শ্রমিকদের। এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সময় চা-শ্রমিক প্রতিনিধিদের মতামত অগ্রাহ্য করে মালিকপক্ষ একতরফাভাবে মজুরি নির্ধারন করে থাকেন। এক্ষেত্রে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সদস্যরাও নির্বিকার থাকেন। ফলে দিন দিন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও, আশানুরূপ মজুরি বাড়ছে না চা শ্রমিকদের।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যে চা শ্রমিকরা স্বাধীনতা যুদ্ধে তীর-ধনুক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরেছিলো আজ স্বাধীন দেশে আমরা তাদের উপর জুলুম করছি। বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকার দিচ্ছি না। তারা আজ ভালো নেই। তাদের স্বাস্থ্যের দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের গড় ওজন সাড়ে ৪৭ কেজি। এই পরিস্থিতি উন্নয়ণে পদক্ষেপ বেয়া হোক।’
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক রনি বলেন, ‘১৮৩০ সালের দিকে আসামের গরীব মানুষজনকে বুঝানো হয়েছিলো যে চা গাছ ঝাড়া দিলেই টাকা পড়বে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। তাদের উপর চলেছে জুলুম ও নির্যাতন। সেই ধারাবাহিকতায় সিলেটের চা শ্রমিকদের উপর জুলুম করা হচ্ছে। ২০০ বছর ধরে তারা চা বাগানে বসবাস করলেও সেই ঘর তাদের নিজেদের হয়নি। আজ শ্রম মন্ত্রণালয়ে শ্রমিকদের সাথে মিটিংয়ে বসে চা বাগান মালিকরা কি করে মজুরি ১৪ টাকা বাড়ানোর কথা বলে? যাদের শ্রমে তারা অট্টালিকা গড়ছেন তাদের তারা কিভাবে অপমানিত করে? এককাপ চায়ে কি পরিমাণ ঘাম,কতটা শ্রম তা আমাদের বুঝা উচিত। প্রধানমন্ত্রী সববিষয় নিয়ে কথা বলেন। আমরা চাই তিনি এই ইস্যুতেও কথা বলুক। শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়াহোক। শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করা হোক। ২০২১-২২ সালের চুক্তির বাস্তবায়ন হোক৷
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও মানববন্ধনে সংহতি জানায়। মানববন্ধনে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমরা কখনো চাইনা জননেত্রী শেখ হাসিনার বাংলায় কোন মানুষ বৈষম্যের শিকার হোক। গত অর্থবছরে করোনাকালেও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ চা উৎপাদন করার রেকর্ড গড়েছে। আমরা পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে দেখতে পাই বিশ্ববাজার এবং দেশের বাজারেও চায়ের দাম বেড়েছে কিন্তু আমার চা শ্রমিক ভাই-বোনদের মজুরি বাড়েনি। আমরা আশা করি, সরকার চা শ্রমিকদের এ নায্য দাবি বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিবে।’