১৩ ই জুলাই, ২০২৪, শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিষয়vক সেমিনারের ৯৭৩ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জানিপপ কর্তৃক আয়োজিত জুম ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জানিপপ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক চৌধুরী।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি গবেষক অধ্যক্ষ মাসুদ আহমেদ।
সেমিনারের মুখ্য আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পি এইচ ডি গবেষক ও বি সি এস এডুকেশন ক্যাডার এর সদস্য বাবু রণজিৎ মল্লিক।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা ও নারী নেত্রী মিসেস লায়লা শারমিন ও পারভীন আক্তার।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু, মেহেরাজ হোসেন ও সাদিয়া হালিমা ।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. কলিমউল্লাহ বলেন, জাতির পিতা ইতিবাচক মনোভঙ্গির অধিকারী ছিলেন।
সেমিনারের প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ মাসুদুল হক চৌধুরী বলেন,
বঙ্গবন্ধু অসম্ভবকে সম্ভব করতেন এবং সব সময় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কর্মপরিকল্পা করে দেশকে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু বিদ্ধস্ত ধ্বংশ স্তুপ সদ্য স্বাধীন দেশকে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা গ্রহন করেণ । দেশের ধ্বংশ হয়ে যাওয়া সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা কে সচল করার উদ্যোগ নেন, হার্ডিঞ্জ ব্রীজ , ভৈরব ব্রীজ, শুভপুর ব্রীজ দেশের হাজার হাজার রেল ও সড়ক সেতু মেরামত করে অল্প সময়ের মধ্যে ই দেশের কানেক্টিভিটি কে সচল করেণ।
অন্যদিকে রাজনৈতিক ও প্রশাসন ব্যাবস্থাকে উপনিবেশিক অবস্থা থেকে একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী করার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু একটি আধুনিক শিক্ষা ব্যাবস্থ্যা গড়ে তোলার জন্য বিজ্ঞানী ড, কুদরতে খুদা ‘র নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন , দেশে ধর্মভিক্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন।
কৃষি ক্ষেত্রে সমবায় ভিক্তিক চাষাবাদ ব্যাবস্থায় হাত দেন, অর্থনৈতিক সংকট থাকা সত্বেও প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয় করণ করেন যার সুফল এখনো চলমান।
বঙ্গবন্ধু অতি অল্প সময়ে ভারতে উদবাস্তু হওয়া এক কোটি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনে পূণর্বাসন করেন য বিশ্বে বিরল ঘটনা।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা লক্ষে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা করে দেশ গড়ায় অংশ নেয়ার উদাত্ত আহবান জানান কিন্তু যারা ফৌজদারী অপরাধ করেছিল অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও ধর্ষনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল তাদের বিচারের আওতায় আনেন ।
দালাল আইন কেরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সহযোগীদের গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন পাশ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এর উদ্যোগ নেন৷ উল্লেখ্য যে সে আইন অনুযায়ী ই বর্তমান আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল গঠিত হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল পরিকল্পিত আধুনিক ও বাস্তবমূখী, তিনি পঞ্চবার্ষিক পরকল্পনা প্রবর্তন উন্নয়নের রুপরেখা স্থির করেন।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য ওয়েষ্ট মিনিষ্টার – মদিনা চার্টার ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীনতার ১১ মাসের মধ্যেই বাঙ্গালীর কৃষ্টি কালচার সমাজ ব্যাবস্থা আমাদের মহান মুক্তযুদ্ধের আদর্শ লক্ষ ইত্যাদি সন্নিবেশিত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জাতীয়তাবাদের চেতনায় সামাজিক বৈষম্য নিরসনের লক্ষে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নিয়ে গগণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান জাতিকে উপহার দেন। এবং নূতন সংবিধানের আলোকে ১৯৭৩ সালের ৭ ই মার্চ সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করেন।
কোষাগার শূন্য ধবংশ প্রাপ্ত একটি দেশকে এত অল্প সময়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক না না প্রতিকূলতা মোকাবিলা কর এ পর্যায়ে আনা শুধু বঙ্গবন্ধুর কারিশমাটিক লিডারশীপেই সম্ভব হয়েছিল।
আমাদের জানিপপের সম্মানিত সভাপতি প্রফেসর ড,নাজমুল আহসান কলিম উল্যা নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা পরবারের সন্তান। তার চাচা কর্ণেল শফিক উল্যা ছিলেন একজন বীর প্রতিক। দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে এ পরিবারের অবদান অবিস্মরণীয়।
সেমিনারের মুখ্য আলোচক পি এইচ ডি গবেষক বাবু রণজিৎ মল্লিক বলেন,
আজকের সেমিনারে বিসিএস (সাধারণ) শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য পিএইচডি গবেষক জনাব রণজিৎ মল্লিক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বের অনেক জাতীয়তাবাদী নেতার সঙ্গে তুলনা করা যায়, তবে তিনি সবচেয়ে বেশি তুলনীয় হতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে। ম্যান্ডেলা বলেছেন, একজন মানুষের দুটি কর্তব্য রয়েছে- একটি হচ্ছে তার পরিবার, পিতামাতা, স্ত্রী-সন্তানের প্রতি, আর অন্যটি হচ্ছে তার সমাজের মানুষের প্রতি। ম্যান্ডেলা মানুষের প্রতি তার দায় পালন করতে গিয়ে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি।
বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও দেখা যাবে যে দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি পরিবারকে বঞ্চিত করেছেন। স্বাধীনতার আগে তার জীবনের একটি বড় অংশ পার হয়েছে মিছিল-মিটিং আর কারাগারের অন্তরালে। তার সন্তান সন্ততি তাদের পিতার সান্নিধ্য বঞ্চিত থেকেছে। আবার নতুন দেশের কর্ণধার হিসেবে তিনি ব্যস্ত থেকেছেন দেশ গড়বার কাজে। তখনো সন্তানরা তার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সন্তানের অনুযোগে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, “আমার তো সাড়ে সাত কোটি মানুষ রয়েছে। তুমি তাদেরই একজন মাত্র।”
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই স্বাধীনতা বিরোধী বিভিন্ন শক্তি বঙ্গবন্ধু সরকারকে অস্থির করে তুলতে বিভিন্নরকম অপপ্রচারের আশ্রয় নেয়, তারা মুজিব পরিবের বিরুদ্ধে কুতসা রটনা করতে শুরু করে। অথচ এমন কোনো নজির নেই যে মুজিব কখনো তার ছেলেদের কোনো রকমের কোনো প্রশ্রয় দিয়েছেন।
রণজিৎ মল্লিক বলেন, যে অপশক্তি শেখ মুজিবের বিরোধীতা করেছে তারা স্বাধীনতার অর্ধ শতক পরেও সমান সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল থাকার একমাত্র উপায় হলো মুজিব-মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ ও চর্চা করার ভেতর দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি পি এইচ ডি গবেষক অধ্যক্ষ মাসুদ আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়নের জন্য যথাযোগ্য কাজ করে গিয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল বাংলার মাটিতে তার পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু কাজ করে গেছেন। ১৯৭২ সালে মার্কিন সাংবাদিকরা বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণে আসার পরে রিপোর্টে এইভাবে বলেন যে – জার্মানির ন্যাৎসি বাহিনীরাও এত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল না। বাংলাদেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা তাতে এখানে প্রতিটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল , বাংলাদেশের যোগাযোগ কাঠামো থেকে শুরু করে সকল বিষয়ের উপর পাকিস্তানিরা ধ্বংস চালিয়েছিল।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু ময়মনসিংহে যান তখন তিনি মেধাবীদের কৃষির জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগান এবং কৃষি ক্যাডার শুরু করেন। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষির উপর অগ্রাধিকার দিতেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি কৃষির উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের অভিজ্ঞতায় বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করেছেন এবং সমাধানের জন্য অটল ভাবে কাজ করে গিয়েছেন।
শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করেন এবং দেড়শ বিঘা সর্বোচ্চ জমির মালিকানা নির্ধারণ করেন। তৎকালীন সময়ে ৪২% ভূমিহীন মানুষ ছিল এবং ১৮% মানুষের হাতে অধিক জমি ছিল। তিনি কৃষি সংস্কার করেন এবং ভূমিহীনদের কাছে ভূমির বন্টন করার জন্য নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেন।
শেখ মুজিবুর রহমান কৃষির সংস্কার শুরু করেছিলেন এবং বর্তমান সরকারও সেই পথ ধরে কৃষির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা
লায়লা শারমিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অতিথি পরায়ণ ছিলেন।
পারভিন আক্তার বলেন , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংকল্প আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে পূরণ করব এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে পথে নারী উন্নয়নে কাজ করব।
জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার সাদিয়া হালিমা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশবকাল কেটেছিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার বাইগার নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে, মেঠোপথের ধুলাবালি মেখে,বর্ষার কাঁদা পানিতে ভিজে ও প্রকৃতির সাথে খেলা করে। শৈশবকাল থেকেই মা-বাবা তাঁকে আদর করে ‘খোকা’ বলে ডাকত। তিনি ছিলেন অদম্য সাহসী ও চঞ্চল স্বভাবের।
মেহেরাজ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সৃজনশীল মানুষ ছিল। বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের মধ্যে সৃজনশীলতা ফুটে উঠতো। বাঙালিকে নতুন করে উজ্জীবিত করতে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য জাদুকারী ছিল।
শারমিন সুলতানা শিমু বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন একটি দেশে কৃষি উৎপাদনের মাধ্যমেই কেবল সকল ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান সম্ভব।
শাকিব হোসেন বলেন, ধৈর্য আর সহনশীলতা, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারের দিক থেকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অনুসরণীয় ও অত্যুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন ।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন, গোপালগঞ্জস্থ বঙ্গবন্ধু বিহজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক কুমার সরকার।