১১ ই জুলাই, ২০২৪, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিষয়ক সেমিনারের ৯৭১ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জানিপপ কর্তৃক আয়োজিত জুম ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জানিপপ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক চৌধুরী।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি গবেষক ও বি সি এস এডুকেশন ক্যাডার এর সদস্য বাবু রণজিৎ মল্লিক।
সেমিনারে গেস্ট অব অনার হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের স্বনামধন্য শিক্ষক প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. জেবুননেসা।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা ও নারী নেত্রী মিসেস হাসিনা সুলতানা ও পারভীন আক্তার ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর আব্দুলাহ আল মাহমুদ।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. কলিমউল্লাহ বলেন, জাতির পিতা বরাবর তার জীবন যাপনে পরিচ্ছন্ন ছিলেন।
সেমিনারের প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ মাসুদুল হক চৌধুরী বলেন,
বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা প্রসঙ্গে গত ৪৯ বছর ধরে যে চক্রান্ত চলছে তার প্রেক্ষিতে বলতে চাই ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ সন্ধায় পাকিস্তানের তদানিন্তন সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিয়েছিলেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেণ যে পূর্ব পাকিস্তান কে বিচ্ছিন্ন করার জন্য শেখ মুজিবের অনড় অবস্থানে পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিতে বাধ্য করে। তার এই পদেক্ষপে পাকিস্তান রাক্ষা হলো। করাচি বিমান বন্দরে জুলফিকার আলি ভুট্টো ও এক ই কথা বলেন। পরবর্তীতে ২৬ শে মার্চ প্রথয় প্রহরে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা ও পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অপরাধে সামরিক আদালতে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে রাষ্টদ্রোহ মামালা হয়। তার রায়ে শেখ মুজিবের ফাঁসির আদেশ হয়। বিশ্ব জনমতের চাপে সে ফাঁসি কর্যকর বিলম্বিত হয় এর মধ্যে ১৯৭১সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভকরে পাকিস্তানি জান্তা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়৷ ইয়াহিয়া ভূট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার সময় বলে বড় ভুল ছিল শেখ মুজিবকে ফাঁসি না দেয়া তুমি তাড়াতাড়ি তা সম্পূর্ণ করো। এখানে পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কাউকে পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য দায়ী করেনি।
১৯৭১ এ ঢাকায় অবস্থান পাকিস্তানি জেনারেলদের অনেক স্মৃতি চারণমূলক বই লিখেছেন । জেনারেল সালিক সিদ্দিক তার বই তে লখেছে যখন অপারেশন সার্চলাইট চলছিলো তখন অজানা তরঙ্গে ক্ষীন কন্ঠে শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা ভেসে আসছিল। তাদের অনেক লিখেছেন শেখ মুজিব জাতিকে যে ভাবে ঐক্যবদ্ধ করে গেছেন তাতে পূর্ব পাকিস্তান রক্ষা করা কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না
২০০৮ সালে মার্কিন ষ্টেট ডিপার্ট্মেন্টের অবমুক্ত করা * পুর্ব পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ* শির্ষক প্রতিবেদন টি ইউ এস ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি কর্তৃক ঢাকা থেকে ২৬ শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তান সময় ভোর ৩টা ৫৫ মি প্রেরিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ উল্লেখ করা হয়। মার্কিন এই দলিল টি ইন্টারনেটের পাতায় পাতায় ঘুরেছে। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণার কথা ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বিশ্বের সকল বিখ্যাত পত্রিকা বিবিসি , ভো আ সহ সকল মিডিয়া প্রচার করে যা অনেক বইতে সংকলিত আছে।
মুলত বঙ্গবন্ধু ই ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য জনগনের ম্যান্ডেট প্রাপ্ত একমাত্র বৈধ ও স্বীকৃত নেতা। এর বিকৃতি যারা করে তাদের জ্ঞান পাপি ছাড়া আর কি বলা যায়।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সদস্য পিএইচডি গবেষক জনাব রণজিৎ মল্লিক বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে একটি ধ্বংস স্তুপের উপর দাড়িয়ে নতুন রাষ্ট্রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মাথায় তিনি তার কর্মকুশলতা দিয়ে দেশকে সার্বিকভাবে মোটামুটি একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যান। কিন্তু তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয় এদেশেরই একটা অংশ রাজনৈতিকভাবে যারা চরম ডানপন্থী বলে পরিচিতি। এদের সাথে যোগ দেয় বামপন্থীদের বিপথগামী একটা অংশ।
তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিব এই জাতিকে তার সব দিয়ে গড়ে তুলতে চেষ্টা করে গেছেন। তিনি এই রাষ্ট্রের বর্তমান ও ভবিষ্যতের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় সব রূপরেখা দিয়ে গেছেন। তিনি অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন তার জাতিকে। ” মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ”-রবীন্দ্রনাথের এই আপ্তবাক্যে তিনি বিশ্বাস করতেন বলেই বাঙালির উপর থেকে তিনি কখনো আস্থা হারাননি। কিন্তু সেই বাঙালিই তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
কিন্তু তিনি বেচে থাকবেন যতদিন অস্তিমান থাকবে এই বাঙালি আর বাংলাদেশ।
সেমিনারের গেস্ট অব অনার প্রফেসর ড. জেবুননেসা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবুল ফজলের লেখা বই থেকে উদধৃতি করে বলেন, জাতির পিতা মধ্যবিত্তের সংস্কৃতিকে মনে প্রাণে ধারণ ও লালন করতেন।
সেমিনারে উপস্থিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, জাতির পিতা ছিলেন উদার মানসিকতার একজন মানুষ। তিনি সকলের কথা শুনতেন ও সকলের প্রতি গুরুত্ব দিতেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন ক্ষমাশীল মানুষ।
সেমিনারে যুক্ত বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা পারভীন আক্তার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননী শেখ হাসিনা তার পিতার মতোই দেশপ্রেমিক ও দূরদর্শী।
আর এক নারী উদ্যোগক্তা মিসেস হাসিনা সুলতানা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও তাদের বংশধরদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হতে হবে। যেসকল মুক্তিযোদ্ধারা ও তাদের বংশধরেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাদের খুজে বের করে সাহায্য করতে হবে। তাহলেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন, গোপালগঞ্জস্থ বঙ্গবন্ধু বিহজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক কুমার সরকার।