জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২২ উদ্যাপন করা হয়েছে।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব শুরু হয়।
প্রথম পর্বে আরও ছিল জাতির পিতা ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়া এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া বাণী পাঠ এবং জন্মদিনের কেক কাটা হয়।
শুক্রবার (১৮ মার্চ) জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় পর্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ ছিল নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি শিশুদের অংশগ্রহণে ভার্চ্যুয়ালভাবে আয়োজিত শিশু আনন্দমেলা। এ আনন্দমেলায় আগে মিশন আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ উপস্থাপন’ এবং ‘নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে পত্রলিখন’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা এবং তাদের ভাষণের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া দ্বিতীয় পর্বে শিশুদের অংশগ্রহণে আরও অনুষ্ঠিত হয় ‘শতবর্ষের নতুন প্রভাত’ শীর্ষক আলেখ্য অনুষ্ঠান, সমবেত সঙ্গীত ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে’ ও নৃত্যানুষ্ঠান এবং র্যাফেল ড্র। ভার্চ্যুয়াল এ আয়োজনে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্য ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানটিতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অঙ্গীকার/ সকল শিশুর সমান অধিকার’ উল্লেখ করে শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের দেশের শিশুদের সমান অধিকার রক্ষা, সাবলিল বিকাশ ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য জাতির পিতা তার সাড়ে চার বছরের সরকারে অনেক কাজ করে গেছেন। তিনি ১৯৭৪ সালে জাতীয় শিশু আইন প্রণয়ন ও প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। এর ফলে শিশু বিকাশের পথ সুগম হয়। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার শিশু বিকাশ ও শিশু উন্নয়নে যেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে, তা তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ এবং জাতিসংঘ শিশু সনদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিশু আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে। চালু রয়েছে বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা। বছরের শুরুতেই শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে রঙ্গিন পাঠ্যপুস্তক। আজ দেশের প্রায় শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছে।
শিশুদের উদ্দেশে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের নানা দিক তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
তিনি বলেন, আমাদের সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর নাম। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। তাই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নানা দিক শিশুদের সামনে তুলে ধরেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে জাতির পিতার সংগ্রামী জীবন সমন্ধে অবহিত করা এবং শিশুকাল থেকেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অভিভাবকসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস্ (বিপা) এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস্ (বাফা) এর শিশু শিল্পী এবং নিউইয়র্কে বসবাসরত শিশু ও তাদের অভিভাবকসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা ভার্চ্যুয়াল এ শিশু আনন্দমেলায় অংশ নেন।