শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর গতকাল রোববারও শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ছিল সরকারি ছুটি। টানা তিনদিনের ছুটিতে কিছুটা চাপ কমেছিলো রাস্তায়। যাতায়াতে মিলেছিলো স্বস্থি। কিন্তু ছুটির পর আজ সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল থেকেই যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী।
গত কয়েকদিন সকালে সড়কের অবস্থা স্বস্তিদায়ক থাকলেও আজকের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পাড়া-মহল্লার গলি থেকে শুরু করে ভিআইপি সড়কেও জট লেগে থাকতে দেখা যায় সড়কে।
সরেজমিনে রাজধানীর মোহম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, কাওরানবাজার, সোনারগাঁও, সাতরাস্তা, মহাখালী, বনানী, কাকলী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, গুলশান-১, গুলশান-২, লিংকরোড, প্রগতি সরণিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় যানজটের ভয়াবহ চিত্র।
যানজট থেকে বাদ যায়নি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও। মূল সড়কে নামার মুখে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে দেখা যায় গাড়িগুলোকে। কোথাও কোথাও যেন ঘুরছিল না গাড়ির চাকা।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে অফিসগামী রবিউল হাসান বলেন, রাস্তার যেই পরিস্থিতি। হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানো ছাড়া উপায় নেই। রোজা রেখে কতক্ষণ আর হাঁটা সম্ভব।
এদিকে, বাস বা প্রাইভেটকারের অবস্থা আরও শোচনীয়। মোন্নাফ আলী নামে এক বাস যাত্রী বলেন, মিরপুর-১০ থেকে বাসে উঠেছি। আগারগাঁও ক্রসিং থেকে বিজয় সরনি পার হতেই ৪০ মিনিট। গাড়ির চাকা ঘুরেছে তবে খুবই মন্থর গতিতে। একটা পর্যায়ে বাসের নিকট গন্তব্যের অনেক যাত্রীকে হেঁটে রওয়ানা করতেও দেখি। আমাকে অগত্যা বসে থাকতে হচ্ছে মতিঝিল যাবো বলে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগের শেরে বাংলা নগর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. তারেক সেকান্দার বলেন, ভয়াবহ অবস্থা। অফিস টাইম ও স্কুল টাইম একই সময় হয়ে গেছে। যে পরিমাণ যানবাহন সড়কে সকাল আটটা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে নামছে তা সামাল দেয়া কঠিন। শুধু শেরে বাংলা নগর এলাকায় নয়, চারদিকে সকাল আজ বাজে গেছে। তবে সকাল সোয়া ১০টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। রাস্তা এখন সচল।
ট্র্যাফিক গুলশানের (ট্রাফিক-মহাখালী জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম রনি জানান, মহাখালী এলাকার অবস্থা ভালো না। তিনদিন ছুটি ছিল। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাস বিভিন্ন জেলার গন্তব্যে ছাড়ার চাপ বেড়েছে। তাছাড়া ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে যানজট বেড়েছে।
উল্লেখ্য, রমজানে ঢাকার যানজট নিরসনে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, সেবা সংস্থা, ব্যবসায়ী, দুই সিটি করপোরেশনসহ ২২টি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। রমজান শুরুর আগে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, যানজট লেগেই থাকে এবং জনসমাগম বেশি এমন শতাধিক স্পট চিহ্নিত করেছে ডিএমপি। ইফতারের আগ মুহূর্তে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন ও প্রতিটি থানা পুলিশকে এ সময়ে ট্র্যাফিক সদস্যদের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে থানা পুলিশকে ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। সব ট্র্যাফিক ও ক্রাইম বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগানো হবে। এ ছাড়া ট্র্যাফিক বিভাগে ফোর্স বাড়ানো হচ্ছে। রমজানে সড়কে উন্নয়নকাজ এবং খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে ওয়াসা, তিতাস, সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে।