জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো টুঙ্গিপাড়ায় বিরাজ করছে শোকের আবহ। বাঙ্গালী জাতির বেদনা মিশ্রিত শোকের দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বাঙ্গালী জাতি হারিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী ও স্বাধীন বংলাদেশের স্থপতি ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বাঙ্গালী জাতি এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এরও অংশ গ্রহনের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-১ মোহাম্মদ শামীম মুসফিক গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ১১ টায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। সকাল ১১ টা ৫০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠে নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করবেন। এরপর সেখান থেকে সড়ক পথে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে পৌঁছাবেন। দুপুর ১২ টায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিন বাহিনীর একটি সশস্ত্র চৌকস দল অনার গার্ড প্রদান করবেন।
পরে ফাতেহাপাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নিবেন। দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মিলাদ মাহফিলে অংশ নিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচী:
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। সকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। পরে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবে নেতৃবৃন্দ। পরে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচীতে অংশ নিবে নেতৃবৃন্দ। এরপর বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে কর্মসূচী। বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নের ৫৪টি ওয়ার্ডে কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
তোরণ ও কালো পতাকা :
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়কে কালো কাপড় দিয়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে। পুরো টুঙ্গিপাড়া জুড়ে শোকের আবহ সষ্টি করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সসহ আশাপাশের এলাকা ঢেকে দেয়া হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে জেলা জুড়ে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক বিশ্বাস বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে সরকারের কাছে আমাদের দাবী বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কাযকর করবেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ বাবুল শেখ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হবে।
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর আমরা যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালবাসি তারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবো।
গোপালগঞ্জ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামরুল হাসান বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সের ধোয়া মোছা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ যাবতীয় কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক সম্পন্ন করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেছেন, স্বাধীনতার মহান স্থাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ১৫ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া সফর করবেন। এই উপলক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষে সর্বোচ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আমাদের সকল ধরনের ব্যবস্থা ইতিমধ্যে গ্রহন করা হয়েছে। আমরা সর্বত্র সজাগ আছি।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতির শোক দিবসের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে টুঙ্গিপাড়ায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিলাদ মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী অংশ নিবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা আরও জানান, জাতীয় শোক দিবসের সকল কর্মসূচি সফল করতে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন, গণপূর্ত, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সহ অন্যান্য দপ্তর প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।