খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ নিয়ে মামলা জটিলতায় ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে পাবনা মানসিক হাসপাতালের রোগী ভর্তি কার্যক্রম।
জটিলতা নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বারবার জানিয়েও কাজ না হওয়ায় শনিবার নতুন করে আবাসিক রোগী ভর্তি বন্ধ ও ভর্তি থাকা রোগীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আদেশ জারি করেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আশ্বাসে সোমবার সে আদেশ প্রত্যাহার করা হলেও নীতিমালার বাধ্যবাধকতায় সংকট কাটতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, সোমবার বিকেলে ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে টেন্ডার কার্যক্রমের উপর দেওয়া স্থগিতাদেশও বাতিল করেছেন আদালত।
মানসিক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৪ জুন পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রোজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এ এইচ এম ফয়সাল হোসেন টেন্ডারে দ্রব্যের নাম উল্লেখ করা জটিলতা নিয়ে বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন।
মামলার বিবাদী হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. আবুল বাসার মো. আসাদুজ্জামান।
আদালত ২৯ জুন সার্বিক বিবেচনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
নিষেধাজ্ঞার কারণে টেন্ডার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে চলতি অর্থ বছরে দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, গত ৩০ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. এ কে এম শফিউল আযমকে স্থানীয় ক্রয় ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি করে সাত সদস্যের কমিটি করে রোগীদের খাবার সরবরাহ করার আদেশ দেয়।
এত দিন এভাবেই খাবার সরবরাহ করা হচ্ছিল। তবে আইনগত সীমাবদ্ধতা ও আর্থিক সংকটে এ প্রক্রিয়ায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ নিয়মবহির্ভূত হওয়ায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ ও আবাসিক রোগীদের বাড়ি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রতন কুমার রায় বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী বছরে নগদ ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ করা যায় না। সেখানে প্রতি মাসে ৫০০ রোগীকে খাওয়াতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে রোগীদের পথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। টাকা পরিশোধ করার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকি করে খাওয়ানো হয়েছে।
বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত ও মৌখিক ভাবে বারবার জানিয়েও কাজ না হওয়ায়, রোগী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সোমবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লিখিত পত্রে চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাজেট বরাদ্দ ও এপিপি অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে স্থানীয় ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ পিপিএ ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮ (সংশোধিত ২০২১) অনুসারে প্রয়োজনীয় ক্রয়ের নির্দেশনা দিলে আপৎকালীন খরচ মেটানোর সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় পূর্বের আদেশ বাতিল করে রোগী ভর্তি শুরু করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে টেন্ডার কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞাও খারিজ করে দেন পাবনার সিনিয়র সহকারী জজ আদালত। এতে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে আর বাধা নেই বলেও জানান তিনি।
তবে, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলেও টেন্ডার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক নীতিমালায় নিয়মিত খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে আরও কমপক্ষে দেড় মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের প্রধান সহকারী আহসান হাবীব।
তিনি জানান, বিকল্প তহবিল থেকে সরবরাহ হওয়ায় খাবারের মান ভালো হচ্ছে না ও প্রয়োজনীয় ওষুধও সরবরাহে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বহির্বিভাগে বিনা মূল্যে ওষুধ প্রদান কমিয়ে দিতে হয়েছে। তবে, মামলা খারিজ হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দ্রুত ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
৫০০ শয্যা বিশিষ্ট দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ৪৮০ জন। এদের ১৫০ জন পেয়িং বেডে ও বাকি রোগীরা ফ্রি বেডে ভর্তি আছেন। ফ্রি বেডে ভর্তি থাকা রোগীদের খাবার ও ওষুধের সকল খরচ বহন করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।