টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামছে পাকিস্তান। এ ম্যাচে নামার আগে ধুলোজমা স্মৃতি হাতড়ে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করতে পারে পাকিস্তান। যে সুযোগ নেই নিউজিল্যান্ডের। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে, বিশেষ করে সেমিফাইনালে সব সময়ই ব্যর্থ নিউজিল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বুধবার (৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় খেলা শুরু হবে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে জিটিভি ও টি স্পোর্টস।
ত্রিশ বছর আগে ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইমরান খানের বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিলো পাকিস্তান। এরপর কোনো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কিউইদের নাগালে পায়নি। ৩০ বছর আগের ওই সুখস্মৃতি নিয়ে আবার নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি পাকিস্তান।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। তিন সাক্ষাতেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে পাকিস্তান। ৯২ বিশ্বকাপের পর ১৯৯৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও নিউজিল্যান্ডকে হারায় পাকিস্তান। এরপর ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সাক্ষাত হয় এই দুই দলের। কিন্তু এখানেও ভাগ্য বদলায়নি কিউইদের, লেখা হয় পাকিস্তানের শাসন করার গল্প।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে, বিশেষ করে সেমিফাইনালে সব সময়ই ব্যর্থ নিউজিল্যান্ড। এটা নিশ্চয়ই একটা ভাবনার জায়গা হয়ে দাঁড়াতে পারে কিউইদের সঙ্গে। মানসিক দিক থেকে এটা হতে পারে বাধাও। ছাড়া গত কয়েকটি আসরে দারুণ খেলেও শিরোপা ঘরে তুলতে না পারার আক্ষেপও সঙ্গী থাকবে তাদের।
বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের হিসেবে পাকিস্তান থেকে এগিয়ে আছে নিউজিল্যান্ড। তবে পাকিস্তানকে সবসময় বলা হয় ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। অর্থাৎ কখন কী করবে পাকিস্তান সেটা আগের থেকে পরিসংখ্যান দেখে বলাটা মুশকিল। দেখা যায়, দুর্দান্ত ফর্মে থেকেও বাদ পড়ছে আসর থেকে। আবার বাদ পড়া পাকিস্তানই জায়গা করে নিচ্ছে পরবর্তী রাউন্ডে। যেমন- এবারো বাদের তালিকাতেই ছিলো দলটি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিশ্চিত করে ফেলেছে সেমির টিকেট। সুতরাং এ হিসেবে নিউজিল্যান্ড থেকে পাকিস্তানকে পিছিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই।
২০১৫ বিশ্বকাপের পুরো আসরজুড়ে দাপুটে ক্রিকেট খেলা নিউজিল্যান্ড ফাইনাল খেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। শিরোপার লড়াইয়ে অজিদের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। ১০১ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটে বড় জয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে মাইকেল ক্লার্কের দল। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও অজিদের মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ড। এবারো ভাগ্য বদলায়নি, ৮ উইকেটের বড় জয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে কখনই শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিততে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলে আসা দেশটি কয়েকবার সুযোগ তৈরি করেও সোনালী শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। এই আক্ষেপ ঘোচানোর মিশনে পাকিস্তানকে হারিয়ে এগিয়ে থাকতে চাইবে কেন উইলিয়ামসনের দল। একই সঙ্গে নিশ্চয়ই লক্ষ্য থাকবে পাকিস্তান গেরো কাটানোর।
সুখস্মৃতি সাহস যোগায়, দুঃসহ স্মৃতি হতে পারে বাধা। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সংবাদ সম্মেলনে কেন উইলিয়ামসনকে এমনই এক প্রশ্ন করা হলো। কিউই অধিনায়ক বলেন, আমার আসলে সেসব দিনের কথা কিছুই মনে নেই। আমার বয়স কেবল দুই ছিল (নিরানব্বই বিশ্বকাপ)। তবে আমাদের নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। বেশ কিছু ভালো মুহূর্ত রয়েছে। আগে কী হয়েছে, তা নিয়ে এখন একদমই ভাবছি না। আমরা সেমিফাইনালের ম্যাচ নিয়েই ভাবছি, যেটা আমাদের জন্য খুব প্রয়োজনীয়।
পাকিস্তান শিবির অবশ্য ৯২ বিশ্বকাপকেই অনুপ্রেরণা মানছে। দলটির ব্যাটিং কোচ ম্যাথু হেইডেন বলেন, হয়তো সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই বিরানব্বই বিশ্বকাপের সঙ্গে। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবেই ওই স্মৃতি থেকে প্রভাবিত হচ্ছি। আমরা প্রত্যেকেই এই প্রতিযোগিতার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা বুঝছি। পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য বিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপ বড় প্রভাব রেখেছিলো।
ইমরানের খানের দলের বিশ্বকাপ মিশনের শুরু যে ভালো ছিলো না, সেটাও মনে করালেন হেইডেন। বলেন, পাকিস্তানের সেবারও বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো ছিলো না। কিন্তু নক আউটে চলে আসার পর দারুণভাবে নিজেদের ফিরে পায় এবং বিশ্বকাপ জেতার মতো পারফরম্যান্স করে। এটাই বড় প্রতিযোগিতার ছন্দ। আপনি জানবেনও না কখন আপনি দৌড়ে টিকে আছেন।