দেশের অর্থনীতি নিয়ে জিএম কাদের ও রিজভীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শিক্ষিত মানুষ বলে জানতাম। শিক্ষিত হয়েও অর্থনৈতিক ইনডেক্সগুলো না পড়ে যে সমস্ত রাজনীতিবিদরা বক্তব্য দেন, তাদের কি বলবো!’
‘সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত গবেষণা ও সংবাদ প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যে ঝুঁকিপূর্ণ ইনডেক্স প্রকাশ করছে, সেখানে ২৫টি দেশের তালিকায় অনেক বড় বড় দেশ আছে, কিন্তু বাংলাদেশের নাম নেই’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই সংবাদগুলো কি এই সমস্ত রাজনীতিবিদরা পড়েন না? না পড়েই তারা যে সব বক্তব্য রাখছেন, সেগুলো তো গুজব রটানোর শামিল। আমি আশা করবো, শিক্ষিত মানুষগুলো যেন অশিক্ষিতের মতো কথা না বলেন।’
তথ্যমন্ত্রী আজ বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বক্তব্য ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হতে পারে’ এবং বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এখন সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে’ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের জিডিপির ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ নিরাপদ। সে জায়গায় আমাদের বৈদেশিক ঋণ জিডিপির মাত্র ১৬ শতাংশ এবং এর বিপরীতে সুদের ব্যয় জিডিপি’র মাত্র ২ শতাংশ। আর জিডিপির ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত সরকারি ঋণ নেয়া যায়। সেই জায়গায় আমাদের ঋণ মাত্র ৩৬ শতাংশ। সুতরাং দেশের অর্থনীতির ভিত শক্ত।
বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা এক নয় উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে কখনো দেরি করেনি, সময়মতো ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার ওপরের দিকে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সে কারণেই ব্লুমবার্গের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যে ডাটা সংগ্রহ করেছে সেখানে অনেক বড় বড় দেশ পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, মেক্সিকো, মরক্কোসহ বহু দেশের নাম থাকা সত্ত্বেও সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। আমাদের রাজনীতিবিদ যারা এ নিয়ে কথা বলছেন, তাদেরকে বলবো একটু পড়াশোনা করার জন্য।
আইনের শাসন নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের নেতিবাচক মন্তব্যের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বিএনপিই আদালতের রায় মানে না। বিএনপির আইজীবীরাই আদালতে প্রধান বিচারপতির দরজায় অর্থাৎ দেশের প্রধান বিচারালয়ে লাথি মেরেছিল। তারা আইন-আদালত কোনটাই মানে না, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। আর দেশে আইনের শাসন আছে বিধায়ই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যকে আদালতের রায়ে জেলে যেতে হয়, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার হয়। আর আদালতে শাস্তি পাওয়া সত্ত্বেও বিএনপিনেত্রী বেগম জিয়াকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে মুক্ত থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। সেজন্য মির্জা ফখরুলের উচিৎ বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো।
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে বিএনপি যাবে না -এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি তো নির্বাচনকেই ভয় পায়। আশা করবো, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, তারা ইসি সংলাপে যাবে। সেখানে গিয়ে তাদের ওজর-আপত্তি থাকলে সেটা জানিয়ে আসবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এর আগে স্যাটেলাইট টেলিভিশন এটিএন বাংলার ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন এটিএন বাংলার চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।