প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে দুর্ভিক্ষের ষড়যন্ত্র ছিল এবং আছে। নির্বাচন যেন না হয় তা নিয়েও ষড়যন্ত্র ছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল আন্দোলন চালিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়াবে, একটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে আমি উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করি। বক্তব্যের শুরুতে আমি গাজা ও বিশ্বের অন্যান্যপ্রান্তে চলমান যুদ্ধবিগ্রহ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সকল প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যুদ্ধ ক্ষেত্রের চেয়েও বহুদূর পর্যন্ত অনুভূত হওয়ায় এ বিষয়ে আমি সকলে দৃষ্টি আকর্ষণ করি। অস্ত্র প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় রসদ ও অর্থায়ন সহজলভ্য এবং কার্যকর করার জন্য সকলকে অনুরোধ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানবতার অস্তিত্বের সংকটকালে ক্ষুদ্রস্বার্থ যে শুধু অনর্থই বয়ে আনে এগুলোর বাস্তবতা আমি সকলের সামনে তুলে ধরি। আর তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা, ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, মার্চের মধ্যে দুর্ভিক্ষের ষড়যন্ত্র ছিল এবং আছে। নির্বাচন যেন না হয় তা নিয়েও ষড়যন্ত্র ছিল। ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো হয়েছে। যারা সরকার উৎখাতের জন্য আন্দোলনকারী তাদের হাত রয়েছে এগুলোর পেছনে। এর আগে পেঁয়াজের খুব অভাব। পরে দেখা গেলো বস্তা বস্তা পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল আন্দোলন চালিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়াবে, একটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, জনগণ যদি এগুলোর প্রতিকার করে তাহলে কেউ কিছু বলতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করেননি, কারণ তারা জানতেন আমি জিতব। যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করতে চায় তাদের অবশ্য মন খারাপ কারণ একটি দেশের মত সরকার গঠনে এখানে কোনো সমস্যা হয়নি।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফেরে প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন বেলা ১১টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। সিকিউরিটি কনফারেন্সের সভাপতির আমন্ত্রণে সেখানে যান তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর দেশের বাইরে এটিই প্রথম সরকারি সফর তার।
জার্মানে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় শেখ হাসিনা যুদ্ধ, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানান।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমান পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন এবং জার্মান ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নমন্ত্রী সভেনজা শুলজেও শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতীয় মুদ্রা টাকা এবং রুপি ব্যবহারের ওপর জোর দেন।
অপরদিকে উইমেন পলিটিক্যাল লিডারের (ডব্লিউপিএল) প্রেসিডেন্ট সিলভানা কোচ-মেহরিন, সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যান্ড পার্টনারশিপ অ্যাক্সেল ভ্যান টর্টসেনবার্গ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক পেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিস, মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ড. নিক ক্লেগও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন।
শেখ হাসিনা মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য দেন। এ সময় ছয়টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করতে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সে অর্থ জলবায়ু তহবিলে জমা দিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।