দ্রুত বদলে যাচ্ছে দেবিদ্বার: কৃষিনির্ভর জনপদ থেকে শিক্ষিত ও উন্নয়নমুখী আধুনিক উপজেলা
কুমিল্লা জেলার উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী উপজেলা দেবিদ্বার একসময় ছিল সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর এলাকা। তবে গত এক দশকে শিক্ষা, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্যসেবার প্রসারে বদলে গেছে এই জনপদের সামগ্রিক চিত্র। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, উন্নত অবকাঠামো ও সচেতন প্রজন্মের হাত ধরে দেবিদ্বার এখন উন্নয়ন সম্ভাবনায় ভরপুর একটি উপজেলা। দেবিদ্বার উপজেলার আয়তন প্রায় ২৩৯ বর্গকিলোমিটার। সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৭২ হাজার (৪৭১,৯২২) জন। গোমতী ও বুড়ি নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলা উত্তরে মুরাদনগর, দক্ষিণে চন্দিনা, পূর্বে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সঙ্গে সীমানা ভাগ করেছে।প্রশাসনিক কাঠামোয় রয়েছে ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ, প্রায় ২০০টি গ্রাম ও ১৪০টি মৌজা। উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন অফিসসমূহ স্থানীয় উন্নয়ন ও নাগরিকসেবা প্রদান করছে। দেবিদ্বারের শিক্ষার হার বর্তমানে ৫০ শতাংশের বেশি, যা প্রতিবছর বাড়ছে। এখানে রয়েছে একাধিক সরকারি-বেসরকারি কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে রেয়াজ উদ্দিন পাইলট সরকারি মডেল হাই স্কুল, দেবিদ্বার সরকারি কলেজ, এবং কয়েকটি ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষা খাতে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যালয়ভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীভর্তি হার বেড়েছে। তবে কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ এখনো সীমিত। দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থানীয় জনগণের প্রধান সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়মিত সেবা দিচ্ছে। তবে বিশেষায়িত চিকিৎসা ও জরুরি সার্জারি সুবিধার অভাবে অনেক রোগীকেই কুমিল্লা সদর বা ঢাকা শহরে যেতে হয়। স্থানীয়রা মনে করেন, যদি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে আধুনিক সরঞ্জাম ও জনবল বাড়ানো হয়, তাহলে স্বাস্থ্যখাতের মান আরও উন্নত হবে। দেবিদ্বারের অধিকাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত। প্রধান ফসল ধান, ভুট্টা, আলু ও সবজি। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসা, পরিবহণ, নির্মাণ শ্রম ও প্রবাসী আয়ের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে স্থানীয় অর্থনীতি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, বাজার সম্প্রসারণ এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের বৈচিত্র্য দেবিদ্বারের অর্থনীতিতে নতুন গতি এনেছে। উপজেলায় বর্তমানে একাধিক সরকারি প্রকল্প চলমান রয়েছে, সড়ক সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ, ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। তবে গোমতী নদীর ভরাট, বর্ষায় জলাবদ্ধতা এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের অভাব এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষা, কৃষি প্রযুক্তি ও কারিগরি খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে দেবিদ্বার আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই কুমিল্লার অন্যতম উন্নত আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। দেবিদ্বার শুধু কৃষি নয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও সমৃদ্ধ। স্থানীয় নাট্যসংগঠন, ক্রীড়া ক্লাব, পাঠাগার ও সামাজিক সংগঠনগুলো নিয়মিতভাবে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। পৌর পার্ক, শিশুপার্ক ও স্থানীয় উৎসবগুলো এখানে জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে। দেবিদ্বার আজ একটি পরিবর্তনশীল উপজেলা। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন অবকাঠামোয় দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের যৌথ উদ্যোগেই দেবিদ্বার আগামী দিনে হয়ে উঠতে পারে “উন্নয়ন ও অগ্রগতির মডেল একটি উপজেলা”।























