লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরে ভবানীগঞ্জের মিয়ারবেড়ি এলাকার আন্ধারমানিক সড়কে প্রতিদিন দেড় শতাধিক পাওয়ার টিলার (ট্রাক্টর/ট্রলি) চলাচল করে।
দানব আকৃতির এ বাহনটি দিনরাত মিলিয়ে অন্তত ১২-১৪ বার ওই কাঁচা সড়কটি দিয়ে ইটভাটার মাটি নিয়ে যাতায়াত করে।
এতে সড়কটি বিনষ্ট হয়ে হাঁটু পরিমাণ বালু জমে গেছে। বিরতিহীনভাবে চলাচলকৃত ট্রলির দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছেন সড়কের পাশের বাড়িঘরের কয়েক হাজার বাসিন্দা এবং নিয়মিত চলাচলকারী ৩ গ্রামের জনগন।
রাস্তার ধুলোবালু প্রতিনিয়ত তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ভাত খেতে গিয়েও থালায় বালুর দেখা পান তারা। আর বালুর আবরণ পড়ছে ঘর-বাড়ি এবং বাড়ির অঙ্গিনায় থাকা শাকসবজি এবং ক্ষেতের ফসলের গায়েও। আসবাবপত্রে বালুর আস্তরণ পড়ে গেছে। রান্নাকরা খাবারেও মিশে যাচ্ছে ধুলোবালু।
এনিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলা দেড় শতাধিক ট্রলির মালিকরা প্রভাবশালী। এছাড়া ট্রলিগুলো নিয়ন্ত্রণে একটি সিন্ডিকেটও তৈরি করে নিয়েছেন তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই এলাকার ইটভাটার মালিক। তাদের প্রকাশ্য মদদে চলছে অবৈধ এসব ট্রলি। জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা অবৈধ ট্রলি চলাচলে বাঁধা প্রদান করলে ইটভাটার মালিকরা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানি করা অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, ট্রলি এবং বালুর অত্যাচারে এলাকার পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে প্রতিবাদ করার সাহস নেই তাদের।প্রতিবাদ করেও চাঁদাবাজির মামলা হয়রানির স্বীকার হয়েছে অনেকে। গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ্যে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন অনেকে।
বাসিন্দারা বলেন, আমাদের জীবন একেবারে অতিষ্ঠ করে তুলেছে এ দানবগুলো। সারাদিন ধুলোবালুর মধ্যে থাকতে হয়। রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে কয়েক মিনিটের জন্যও বের হওয়া যায় না। পরনে থাকা কাপড় ধুলোয় বিবর্ণ হয়ে যায়। ঠিকমতো মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে বা বাজারে যেতে পারি না। কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে এ ভাঙা এবং বালুময় সড়ক দিয়ে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে কষ্ট হয়। কারণ ট্রলি ছাড়া এ রাস্তা দিয়ে আর কিছু চলে না। বর্ষাকালে রাস্তায় বড় বড় গর্ত এবং হাঁটু পরিমাণ কাঁদা থাকে। তখন চলাচল আরও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবানীগঞ্জ এলাকায় স্থাপিত ইটভাটার মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা। দু’টি ভাটার মালিক ভবানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি, আওয়ামীলীগ নেতা মোক্তার হোসেন বিপ্লব ও মামুনুর রশিদ,যুবলীগ নেতা জসীম উদ্দিন জসীম, সোহাগুর রহমান শুভ এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি রুবেল হাওলাদার ভাটার মালিক।
মূলত তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এ সিন্ডিকেট। দেড় শতাধিক ট্রলির শতাধিক মালিক, দুই শতাধিক চালক এবং মাটি ব্যবসায়ীরা মিলিয়ে এলাকায় বিশাল একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। ফলে পুরো সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় এলাকার বাসিন্দারা।
আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ ট্রলির বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ফসলি জমির মাটি রক্ষার্থেও গ্রহণ করা হয়নি কোনো উদ্যোগ। যার ফলে ভুক্তভোগীরা এক দিকে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এ সিন্ডিকেট।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, রাস্তায় ট্রলি চলাচলের কোনো অনুমতি নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ট্রাক্টর বা ব্যবহার করার কথা কৃষি কাজে।
বেশ কয়েকটি ট্রলিকে জরিমানা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অবৈধ ট্রলি রাস্তায় চলাচল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।