ঢাকা , শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় ২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন

মোঃ সুইট হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি

নওগাঁর আদালত অপহরণ ও হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
হত্যা মামলার রায় আদালত জানায়, ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের নাজমুল নামের এক স্কুলছাত্রকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি করে। পরে হত্যার পর লাশ গুম করে একটি চক্র।
এ ঘটনায় নিহত নাজমুলের বাবা বদলগাছী থানায় একই গ্রামের মিশু, পিংকি ও শিশু হুজাইফা ও সাজু আহম্মেদরের নামে অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ ঘটনার তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের নামে মামালা দায়ের করে।
দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ২০ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মিশু ও পিংকিকে মৃত্যুদণ্ড এবং হুজাইফা ও সাজু আহমেদকে দশ বছরের আটকাদেশ প্রদান করে আদালত।
এ ছাড়া শিশুদের বর্তমান বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় তাদেরসহ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামিকে সাজা পরোয়ানা মূলে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার রায় আদালত জানায়, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলায় এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এবং ভিডিও ধারণ করেন মোরশেদ ও রবিউল নামের দুই যুবক। পরবর্তীতে ওই মেয়েকে রবিউল বিয়ে না করলে মেয়ের পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়।
বিয়ের পরে রবিউল ওই মেয়ের স্বামীর কাছে ধর্ষণের ভিডিও এবং আপত্তিকর ছবি পাঠায়। ওই মেয়ের স্বামী তাকে তালাক দেন। পরবর্তীতে মেয়ের পরিবার রবিউলকে বিয়ে করতে বললে রবিউল বিয়েতে অস্বীকৃতি জানান। কিছুদিন পরে ওই মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে দিলে রবিউল তার দ্বিতীয় স্বামীর কাছেও সেই ভিডিও ও ছবি পাঠান। তখন তার দ্বিতীয় স্বামী আইনি পরামর্শের কথা বলে ওই মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
ধর্ষণের শিকার ওই মেয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলে মান্দা থানা পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা থাকার রিপোর্ট প্রদান করেন।
দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। পরে মামলায় মোরশেদ ও রবিউল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সুলতানা পারভিন নামে এক নারীকে খালাস দেওয়া হয়েছে, কারণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
উভয় মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিশেষ কুশলি রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ১০:৪১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
৫১৮ Time View

নওগাঁয় হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় ২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন

আপডেটের সময় : ১০:৪১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

নওগাঁর আদালত অপহরণ ও হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
হত্যা মামলার রায় আদালত জানায়, ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের নাজমুল নামের এক স্কুলছাত্রকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি করে। পরে হত্যার পর লাশ গুম করে একটি চক্র।
এ ঘটনায় নিহত নাজমুলের বাবা বদলগাছী থানায় একই গ্রামের মিশু, পিংকি ও শিশু হুজাইফা ও সাজু আহম্মেদরের নামে অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ ঘটনার তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের নামে মামালা দায়ের করে।
দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ২০ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মিশু ও পিংকিকে মৃত্যুদণ্ড এবং হুজাইফা ও সাজু আহমেদকে দশ বছরের আটকাদেশ প্রদান করে আদালত।
এ ছাড়া শিশুদের বর্তমান বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় তাদেরসহ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামিকে সাজা পরোয়ানা মূলে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার রায় আদালত জানায়, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলায় এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এবং ভিডিও ধারণ করেন মোরশেদ ও রবিউল নামের দুই যুবক। পরবর্তীতে ওই মেয়েকে রবিউল বিয়ে না করলে মেয়ের পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়।
বিয়ের পরে রবিউল ওই মেয়ের স্বামীর কাছে ধর্ষণের ভিডিও এবং আপত্তিকর ছবি পাঠায়। ওই মেয়ের স্বামী তাকে তালাক দেন। পরবর্তীতে মেয়ের পরিবার রবিউলকে বিয়ে করতে বললে রবিউল বিয়েতে অস্বীকৃতি জানান। কিছুদিন পরে ওই মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে দিলে রবিউল তার দ্বিতীয় স্বামীর কাছেও সেই ভিডিও ও ছবি পাঠান। তখন তার দ্বিতীয় স্বামী আইনি পরামর্শের কথা বলে ওই মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
ধর্ষণের শিকার ওই মেয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলে মান্দা থানা পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা থাকার রিপোর্ট প্রদান করেন।
দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। পরে মামলায় মোরশেদ ও রবিউল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সুলতানা পারভিন নামে এক নারীকে খালাস দেওয়া হয়েছে, কারণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
উভয় মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিশেষ কুশলি রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।