জাসদ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের বক্তব্য শুধুমাত্র নির্জলা মিথ্যাচারই নয়, তার রাজনৈতিক অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আড্ডাখানা হিসেবেই জাসদ গণবাহিনী গঠন করেছিল’ বলে প্রদত্ত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাসদ নিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানকের বক্তব্য শুধুমাত্র নির্জলা মিথ্যাচারই নয়, তার রাজনৈতিক অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। জাসদ একশ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার দল। জাসদে কখনই খন্দকার মোস্তাকের মতো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিরা নেতৃত্বে আসাতো দূরের কথা, কোথাও কোনো জায়গাও পায়নি।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জাসদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পথেই অগ্রসর হচ্ছিল। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সেই নির্বাচনে জাসদের অনেক প্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার পরও জাসদের দলীয় সংসদ সদস্যরা সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করছিলেন। তৎকালীন সরকার জাসদের সংসদীয়বিরোধী দলীয় ভূমিকা সহ্য না করে জাসদের ওপর চরম রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন-নির্যাতন শুরু করে। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ জাসদের শান্তিপূর্ণ স্মারকলিপি দেওয়া কর্মসূচিতে রক্ষীবাহিনী গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। জাসদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা এবং একযোগে জেলা ও থানা পর্যায়ের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। পরদিন আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা চালানো এবং আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রাইভেট বাহিনী, পুলিশ, রক্ষীবাহিনী সারাদেশে জাসদের নেতাকর্মীদের ওপর হত্যা-নির্যাতন-গ্রেফতার চালাতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে জাসদের সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গণবাহিনী গঠন করতে বাধ্য হয়। গণবাহিনীর সদস্যরা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সুতরাং জাসদ ও গণবাহিনী নিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানকের বক্তব্য কেবলমাত্র নির্জলা মিথ্যাচারই নয়, এ বক্তব্য তার রাজনৈতিক অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরও বলেন, জাসদ বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করেছে বলেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে আওয়ামী লীগ স্বপ্রণোদিত হয়েই জাসদের সঙ্গে ঐক্যের রাজনীতির পথ গ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগ এ পথেই জিয়ার সামরিক শাসন, এরশাদের সামরিক শাসন এবং পরে ২০০৪ সাল থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে জাসদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যের পথে এগিয়েছে। জাসদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐক্যকে কখনই বিএনপি-জামায়াতসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি পছন্দ করেনি।
সাজ্জাদ হোসেন জাহাঙ্গীর কবির নানকের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, নানক কী বিএনপি-জামায়াতকে খুশি করতে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় ঐক্যের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই এ ধরনের মিথ্যাচার ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছেন?