Friday , 29 March 2024
শিরোনাম

নীলক্ষেতে আগুনে অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে ছাই, কোটি টাকার ক্ষতি

রাজধানীর নীলক্ষেতে বইয়ের মার্কেটে আগুন লেগে পুড়ে গেছে অর্ধশতাধিক দোকান।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে এই আগুনের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট রাত ৮টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

বইয়ের মার্কেটের পশ্চিম পাশে আগুন লাগার পর এক পর্যায়ে তা ছড়িয়েছে দুই পাশেই। দোকান মালিকদের দাবি, অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে আগুনে।

দুর্ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তদন্ত করতে কমিটি করা হবে।

দোকানিদের অভিযোগ, ফোন দেয়ার পর প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট এসেছে শুধু একটা। এরপর আরও কয়েকটা আসলেও তারা শুধু উপর থেকে পানি ছিটিয়েছে।

মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রচুর মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। কিছুক্ষণ পরপর পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস তাদের বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে, হ্যান্ড মাইকে বলেও মানুষের ভিড় কমাতে পারেনি।

নিউমার্কেট থানার ডিউটি অফিসার শাহীনুর আক্তার বলেন, ‘আগুন লাগার পর দ্রুতই ছড়িয়ে যায়। কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এবং পুলিশ সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।’

মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকলেও বইয়ের মার্কেট এদিন খোলা ছিল বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।

কয়েকজন দোকান মালিক জানান, করোনায় দীর্ঘদিন মার্কেট বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিয়ে মার্কেট মঙ্গলবারেও খোলা রাখা হয়। আগুনে পোড়ার পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে দেয়া পানিতেও ভিজে গেছে অনেক বই।

ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টাফ অফিসার মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় দোকানিরা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারেননি। যে কারণে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে আগুন ছড়িয়েছে।’

তিনি জানান, মার্কেটের লাভলি হোটেলের অংশ থেকে আগুন অন্য দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এর কারণ ও উৎপত্তিস্থল এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।

আগুন লাগার পর অনেক বই বিক্রেতা দোকান থেকে তাদের বই বের করে নিয়ে আসতে পারলেও অধিকাংশই পারেননি। কিছু বই দোকানদাররা তাদের দোকান থেকে সব বই রাস্তায় এনে রাখেন। এরপর ভ্যান এবং লেগুনায় নিরাপদ জায়গায় সেসব বই নিয়ে যাওয়া হয়।

নীলক্ষেতের সংলাপ বই ঘরের মালিক কামাল উদ্দিনের স্ত্রী নুর জাহান বেগম বলেন, ‘আমার সংসার এই দোকানের উপর। এটার যদি কিছু হয়ে যায় আমার আর কিছুই থাকবে না।’

অগ্নিকাণ্ডের সময় বই মার্কেটের ভেতরে ছিলেন বাংলাবাজার থেকে নীলক্ষেতে বই সরবরাহ করা আবদুল জলীল। তিনি বলেন, ‘আগুনে কয়েকটা দোকানের একটা বইও বের করা যায়নি। সব পুড়ে ছাই।’

তিনি জানান, এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বাবুল বুক কর্নার, রাজু বুক সেন্টার, চারুকলা, গীতাঞ্জলি, ফ্রেন্ডস বুক কর্নার, তপন লাইব্রেরি, সোহেল লাইব্রেরি, মিন্টু লাইব্রেরি, মাইয়ের দোয়া লাইব্রেরি, ইব্রাহিম বই ঘর, আমির বুক সেন্টারসহ আরও কয়েকটা দোকান।

ইউনাইটেড পাবলিকেশনস নামের একটি দোকানে কাজ করা রবিউল বলেন, ‘বাবুল বুক সেন্টারে আমার বন্ধু হাশেম কাজ করে। তিনি সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে বিডিআর তিন নম্বর গেইট পর্যন্ত গেছেেন। এর মধ্যেই তাকে আমরা ফোন দিয়ে আগুন লাগার ঘটনা জানাই। তিনি সেখান থেকে আসতে আসতে সব শেষ।

‘যাদের দোকান বন্ধ ছিল তারাই মূলত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যাদের দোকান খোলা ছিলো তারা কিছু হলেও বের করতে পেরেছেন।’

আখন বই বিতানের মালিক সুলতান বলেন, ‘আমির বুক সেন্টার সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। দোকানটার মালিক আমির একটু আগে বেহুঁশ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেছেন। শুধু তার দোকান না এখানে ৭০-৮০টা দোকান পুড়ে গেছে।’

বাবুপুরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য আবদুর রহীম বলেন, ‘শাহজালাল বুক সেন্টারে বৈদ্যুতিক যন্ত্র দিয়ে ওয়ারিংয়ের কাজ করেছে। সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত। আমরা ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিলে তারা একটি ইউনিট পাঠায়। সেটি ব্যর্থ হলে পরে তারা আরও ইউনিট পাঠায়।’

দেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের বাজার হিসেবে পরিচিত নীলক্ষেত বই মার্কেটে এর আগে ২০১৭ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের পাশের এই মার্কেটটিতে সব সময়ই শিক্ষার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

Check Also

যত জঙ্গি ধরেছি, তাদের কেউ মাদ্রাসার ছাত্র নন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যত জঙ্গি ধরেছি, তার মধ্যে কেউই মাদ্রাসার ছাত্র নন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x