আর মাত্র ২৪ দিন পরেই উদ্বোধন করা হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ঘেরা সেতুটিতে চলবে যানবাহন। এই সেতুটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু।
তবে কেবল এই রেকর্ড নয়, পদ্মা সেতুর ঝুলিতে রয়েছে ৫ বিশ্ব রেকর্ড। যার মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় এটি কেবল একটি সাধারণ ব্রিজ বা সেতু নয় বরং বাঙালির অহংকার হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর রেকর্ডগুলো জানুন।
#গভীরতম পাইল
খরস্রোতা পদ্মা নদীতে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। পানি প্রবাহের বিবেচনায় বিশ্বে আমাজন নদীর পরই এর অবস্থান। মাটির ১২০ থেকে ১২৭ মিটার গভীরে গিয়ে পাইল বসানো হয়েছে এই সেতুতে। পৃথিবীর অন্য কোনো সেতু তৈরিতে এত গভীরে গিয়ে পাইল প্রবেশ করাতে হয়নি।
পদ্মা সেতু পাইলিং ও খুঁটির কিছু অংশে অতি মিহি মাইক্রোফাইন্ট সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এসব সিমেন্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে। সাধারণত কোনো সেতু তৈরিতে এত মিহি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয় না।
পদ্মা সেতুর নদীতে থাকা ৪০টি পিলারের নিচের পাইল ইস্পাতের। আর ডাঙার দুইটি পিলারের পাইল কংক্রিটের। নদীতে যেসব পাইল বসানো হয়েছে সেগুলোতে দেওয়া হয়েছে ৩ মিটার ব্যাসার্ধের ইস্পাতের বড় পাইপ, যার ভেতরের অংশ ফাঁপা। নদীতে থাকা ৪০টি পিলারের মধ্যে ১৮টি পিলারের নিচে ইস্পাতের এমন ছয়টি করে পাইপ দেওয়া হয়েছে। বাকি ২২টি পিলারে বসানো হয়েছে ৭টি করে পাইপ। ডাঙার দুইটি পিলারের নিচে পাইল আছে ৩২টি। নদীতে পাইলিং করে তার মধ্যে রড ও কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে।
#সর্বোচ্চ সক্ষমতার বিয়ারিং
পদ্মা সেতু এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন তা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও অটল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। সেতুটিকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বেয়ারিং’। যার সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এত বেশি সক্ষমতা সম্পন্ন বিয়ারিং এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও পদ্মা সেতু টিকে থাকতে পারবে।
#নদী শাসন
নদী শাসনের দিক থেকেও রেকর্ড করেছে এই সেতু। ১৪ কিলোমিটার নদী শাসন করা হচ্ছে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে। এর মধ্যে সেতুর মাওয়া প্রান্তে ১.৬ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১২.৪ কিলোমিটার এলাকা নদী শাসনের আওতায় এনে কাজ চলছে। পদ্মা সেতু তৈরিতে মোট খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে নদী শাসনের জন্য। এর আগে নদীশাসনে এককভাবে এত বড় দরপত্র বিশ্বে আর হয়নি।
#ব্রিজে ব্যবহৃত ক্রেন
পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি চীন থেকে আনা হয়েছে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুণতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জুন থেকে শুরু করে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ক্রেনের জন্য খরচ হয়েছে সাড়ে তিন বছরে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে আর কোনো সেতু তৈরিতে ক্রেনের এত ভাড়া গুণতে হয়নি। উল্লেখ্য, এই ক্রেনটির বাজার দর ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
#সেতু তৈরির উপাদান
আরেকটি রেকর্ড রয়েছে এর ঝুলিতে। পদ্মা সেতুই বিশ্বে প্রথম যেটি কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে। এই দুইটি উপাদানে এর আগে কোনো সেতু তৈরি হয়নি।
অর্থাৎ, নিজের বৈশিষ্ট্যের কারণেই পদ্মা সেতু বাংলাদেশ তো বটেই, পুরো বিশ্বেই আলোড়ন সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।