ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ট্রেন যাবে আগামী অক্টোবরে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে এই ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে একটি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে রেল সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প চলমান আছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ থেকে রেলের দুই অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কাছে চিঠি দিয়ে পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য একটি ট্রেন চাওয়া হয়েছে। ট্রেনটি পরীক্ষামূলক চলাচলের আগের দিন, অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর প্রস্তুত রাখা হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, সাতটি বগি (কোচ) দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি চালানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর ইঞ্জিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি; বগিগুলোও নতুন, চীন থেকে আনা। পরীক্ষামূলক যাত্রায় রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাবেন। এর আগে পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইন বসানো সম্পন্ন হলে ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়। এবার পুরো পথে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করবে।
রেলওয়ে সূত্রে আরও জানা গেছে, আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চেয়ে সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তারিখ নিশ্চিত করলেই উদ্বোধনের আয়োজন শুরু হবে। তবে এই রেলপথে দিনে কয়টি ট্রেন চলাচল করবে, তা এখনো ঠিক করেনি রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান বলেন, উদ্বোধনের আগে পরীক্ষামূলক চলাচল একটা রেওয়াজ। সেটাই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় পেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৮২ কিলোমিটার। ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে নতুন রেললাইন কেরানীগঞ্জ হয়ে উড়ালপথে পদ্মা সেতুতে মিলেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন ধরে কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া হয়ে ভাঙ্গায় ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ভাঙ্গার সঙ্গে অবশ্য ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর ট্রেন যোগাযোগ আগে থেকেই রয়েছে।
পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে ২০১৬ সালে প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। এর আওতায় ১৭২ কিলোমিটার মূল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ৪৩ কিলোমিটার লুপ লাইন (স্টেশনের আগে-পরে বাড়তি লাইন) নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ১০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী বগি কেনা হয়েছে। এগুলো দিয়ে নতুন ট্রেন চালু করা হবে। পুরো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। আগামী বছরের জুন মাসে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। এই পথে কোনো রেলক্রসিং থাকবে না। কারণ, যেখানে রেললাইন ও সড়ক মিলেছে, এর সবগুলোতেই পাতালপথ করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ২০টি স্টেশন থাকবে, যার মধ্যে ১৪টি নতুন এবং ৬টি আগে থেকেই রয়েছে। আগের স্টেশনগুলোরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৩ মে অনুমোদন করা হয়। সে সময় এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এই রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে চীনের অর্থায়নে, জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতে। প্রকল্পের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। বাকি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চালু করার জন্য সব প্রস্তুতি রয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলক চলাচল করবে ট্রেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে আরও পরীক্ষামূলক চলাচল হতে পারে। আগামী বছর যশোর পর্যন্ত রেল চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।