পরীক্ষার হল থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের লাইভ ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংগঠন নিয়ে বিব্রতকর মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনারুল আজিম আনার।
পরীক্ষার হল থেকে লাইভে আসা ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মনির হোসেন সুমন। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে গত শুক্রবার ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুকে লাইভে ছাত্রলীগ, এমপি আনার, পড়াশোনা এবং শিক্ষা বোর্ড নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমন।
উপজেলার প্রিজম কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কম্পিউটার অফিস এপ্লিকেশন বিষয়ে ৬ মাস মেয়াদী কোর্সের শিক্ষার্থী হিসেবে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যেই ওই ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক লাইভটি ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।
শুক্রবার দেশব্যাপী কম্পিউটার অফিস এপ্লিকেশন ও গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ে ৬ মাস এবং ৩ মাস মেয়াদী কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত লিখিত এবং ১১.৩০ মিনিট হতে দুপুর ১২.৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রাকটিকাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালীন দুপুর ১২ টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভ শুরু করেন মনির হোসেন সুমন।
৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ওই লাইভে অনেক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন মনির হোসেন। একপর্যায়ে অবশ্য ফেসবুক থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার আগেই ভিডিওটি অনেকের হাতেই চলে যায় এবং এটি ভাইরাল হয়।
লাইভ ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, আমাদের পরীক্ষা চলছে, সবাই লিখছে আমি বসে আছি। সবাই লিখছে বাংলায়, কিন্তু আমি বাংলায় লিখি না, ইংলিশে লিখি। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল পরীক্ষার হল থেকে ফেসবুকে লাইভ দেব। আমার সেই ইচ্ছা আজ পূরণ হয়েছে। ম্যাডামও দেখি আমার ভিডিও করছে। আমরা ছাত্রলীগ যেখানে যাবো সেখানেই বুলেট।
লাইভে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, পরীক্ষার খাতায় বায়োডাটায় গ্রুপের জায়গা লিখে দিয়েছি, এমপি আনার গ্রুপ করি। স্যাররা এ প্লাস না দিলে বোর্ড মোড ভেঙে ফেলবানে। জয়ও তাই লিখেছে। আমার লাইভটি কালীগঞ্জ ভাইস চেয়ারম্যান দেখছেন।
তিনি আরও বলেন, ম্যাডাম আপনি কিছু বলেন আমার লাইভে। পরীক্ষার হল থেকে লাইভে আছি তাতে কি হয়েছে। আমার প্রাণের সংগঠন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান নাজিম বলেন, পরীক্ষার হলে তো লাইভ করা ঠিক না। তবে সাধারণ সম্পাদক লাইভে এসে কি বলেছে সেটি আমি জানি না। তবে আমি বিষয়টি শুনলাম। অবশ্যই খতিয়ে দেখে যদি তার এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, আমি তো পরীক্ষা চলাকালে লাইভ করিনি, পরীক্ষা শেষ হলে ছোট একটা লাইভ করেছিলাম।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ইনচার্জ মাহবুব উল ইসলাম জানান, পরীক্ষা ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা সকলের জন্য সমান। সেখানে ছাত্রলীগ নেতা হোক, আর সাধারণ শিক্ষার্থীই হোক না কেন। কেন্দ্রে ফেসবুক লাইভের কোনো সুযোগ নেই। এ ঘটনায় যেই জড়িত থাক, ঘটনাটি তদন্ত করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনারুল আজিম আনার বলেন, এটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এ সময় কেন্দ্র পরিচালনাকারীদের দোষী হিসেবে আখ্যায়িত করে ওই কেন্দ্র বাতিলের কথা জানান তিনি। একইসঙ্গে পরীক্ষার হল থেকে ফেসবুক লাইভে এসে বিতর্কিত ও আপত্তিকর মন্তব্য করার ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান তিনি।