ইউক্রেনে ক্রেমলিনের সামরিক অভিযান নিয়ে রাশিয়ার ওপর দেয়া পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পশ্চিমারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকেই ‘বৈশ্বিক আধিপত্য’ হারাতে থাকবে।
আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (১৬ মার্চ) পুতিন এক ভাষণে বলেন, পশ্চিমাদের তথাকথিত কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপকথা ভেঙে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, পশ্চিমা উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য মূল্য দেয়া পুরো পৃথিবী এখন তাদের আধিপত্যের অবসান চাইছে।
এ সময় পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া তিনি রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা অবরোধের ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতির বিষয়েও সতর্ক করেছেন।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করার বিষয়ে পুতিন বলেন, এবার অন্যান্য দেশ তাদের কাছে সম্পদ রাখতে দুবার ভাববে। পুতিনের মতে, পশ্চিমা অভিজাতশ্রেণি তাদের দেশগুলোকে মিথ্যার সাম্রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া তার অবস্থান বিশ্ববাসীকে দেখিয়েই যাচ্ছে।
তবে পশ্চিমা এক তরফা অবরোধের মধ্যেও রাশিয়ার প্রতি ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করেছে চীন। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি বদলে যাচ্ছে দ্রুত। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও পাশে পায়নি পশ্চিমারা। এমন কি ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্কও রাশিয়ার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র ইরান তো রয়েছেই।
সর্বশেষ সৌদি তেলের চার ভাগের একভাগের ক্রেতা চীনের কাছে বেচার ক্ষেত্রে সে দেশের নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ানে লেনদেনের বিষয়টি বিবেচনা করছে সৌদি আরব। এমন পদক্ষেপ ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের অবস্থান শক্তিশালী করবে এবং রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের অবস্থান দুর্বল হয়ে যাবে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট তাদের সেনাদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তান ও সদ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাওয়া ভারত উভয় দেশই জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত থাকে। কোনো পক্ষে ভোট না দেয়া আপাততদৃষ্টিতে নিরপেক্ষতা মনে হলেও রাশিয়া এমন অবস্থানকে তাদের পক্ষের বলেই মনে করে।
এমনকি পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে পশ্চিমা চাপ প্রয়োগে নতিস্বীকার করবে না পাকিস্তান। এমনটা জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান পশ্চিমাদের দাস নয়’। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফ্রিকার দেশগুলোকেও বাগে আনতে সক্ষম হয়নি পশ্চিমারা।
এমন বিশ্ব বাস্তবতায় পশ্চিমাদের একচ্ছত্র আধিপত্য কমে আসছে। এমনটা বলাই যায়।