জরিপ ফলাফলের ভিত্তিতে পোশাক শিল্পে সর্বনিম্ন গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। দুজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে সামনে রেখে একটি পরিবারের ন্যূনতম খরচ হিসেবে করে এ প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
রোববার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘গার্মেন্টস খাতে নূন্যতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’য় এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।
যেখানে বলা হয়, একজন পোশাক শ্রমিকের পরিবারের খাবার খরচ ১৬ হাজার ৫২৯ টাকা ও অন্যান্য খরচ ১২ হাজার ৮৮১ টাকা। মোট মাসিক খরচ ২৯ হাজার ৪১০ টাকার। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি যোগ করলে দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৯৪২ টাকা। সঙ্গে ১০ শতাংশ সঞ্চয়ও উল্লেখ করা হয়েছে, যা দুজনের আয়ের গড় করলে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা ৭৬টি কারখানার ২২৮ জন শ্রমিকের ওপর গবেষণা করে এই প্রস্তাব দিচ্ছে। বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি প্রতি পোশাকে বাড়তি ৭ সেন্ট দেয়, তাহলে এই মজুরি দিতে কারখানা মালিকেরা চাপে পড়বেন না।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই মুহূর্তে পোশাক খাতে মজুরি পুনর্নির্ধারণের একটা প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে গত এপ্রিলে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত বিষয় আলাপ আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে দেখছি শ্রমিক প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাবনাগুলো হাজির করছেন। আবার অন্যদিকে মালিকপক্ষের দিক থেকে সরাসরি কোনো প্রস্তাবনা না থাকলেও বিভিন্নভাবে তারা তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এগুলোর আলোকে আগামীতে নতুন মজুরি পুনর্নির্ধারিত হবে, যেটা ২০১৮ সালে সর্বশেষ হয়েছিল। বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও গার্মেন্টস খাতের মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগতভাবে এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জায়গা থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে কারণ সামনে যেহেতু নির্বাচন।
তিনি বলেন, ২৭ শতাংশ কারখানা মালিক মনে করেন ১২ হাজার টাকার উপরে প্রায় ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে পারেন। শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা চেয়েছেন। আবার শ্রমিক সংগঠনগুলো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম বেতনের প্রস্তাব করেছে। পোশাক খাতে জড়িত শ্রমিকের পরিবার ছোট হয়ে আসছে। আমরা গ্রেড সেভেনের জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করছি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা। আমরা মনে করি গ্রেড সেভেনে একজন পোশাক শ্রমিকের এতটুকু পাওয়া প্রয়োজন।
পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তামিম আহমেদ। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে যখন মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, সে সময় এসে এই মজুরি নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউনাইটেড নেশন্সের মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকের এই ন্যূনতম মজুরিকে দেখার চেষ্টা করেছি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৭৬ শতাংশ পোশাক কারখানার ২২৮ জন শ্রমিকের ওপর জরিপ করে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই খাতের ৬ জন স্টেক হোল্ডারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশের চেয়ে পোশাক শ্রমিকদের আমরা কম বেতন দিচ্ছি। ২০১৮ সালের যে মজুরির কথা বলা হলো সেটা গত ৫ বছরে কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা যদি দেখি, তাহলে দেখব সাম্যকভাবে বাস্তবায়নের জায়গায় বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। ৫ বছরে এটার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ৪২.১ শতাংশ ফ্যাক্টরিতে গ্রেডিং সিস্টেমটাই নেই। এর ফলে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড থেকে সিলেক্ট করা গ্রেডওয়াইজ কী তারা বেতন দিচ্ছে না? সেখানে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। যদিও গ্রেডিং সিস্টেম অনুযায়ী বেতন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। বিজেএমইএ, বিকেএমিএ-এর মেম্বার না এমন কারখানায় এই নন গ্রেডিং সিস্টেমটা বেশি।
২৮ শতাংশ শ্রমিক গ্রেডিং সিস্টেম সম্পর্কে জানে না উল্লেখ করে তামিম বলেন, ৩১ শতাংশ শ্রমিক জানে না তারা কোন গ্রেডে কাজ করছে। অর্থাৎ একদিকে কারখানা গ্রেড সিস্টেম ফলো করছে না, অন্যদিকে শ্রমিকরা জানছে না তারা কোন গ্রেডে কাজ করছে। আবার ৩০ শতাংশ কারখানা সংশ্লিষ্টরাও এই গ্রেডিং সম্পর্কে জানে না। ২০১৯ সালের পরে যোগদান করেছে, তাদের কিন্তু ৮ হাজার টাকার নিচে পাওয়া সুযোগ নেই। কিন্তু ৪১.৭ শতাংশ শ্রমিক আমরা পেয়েছি তাদের বেতন ৮ হাজার টাকার নিচে। প্রতিবছর নির্দিষ্ট হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়নি ১৭.১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।