প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এর আগে মণ্ডপগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে জাতীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে এক এক করে প্রতিমা পলাশীর মোড়ে আসে। পরে শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে হাজারো মানুষ কেন্দ্রীয় এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। পলাশীর মোড় থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুড়িগঙ্গা তীরে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হয়।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওয়াইজঘাটে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও নৌ পুলিশ বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জন দেখতে ওয়াইজঘাটে হাজারো মানুষ হাজির হন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ পৃথিবীতে আসেন। আর দশমার দিন বিসর্জনের মাধ্যমে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয় তাকে। দেবীর আগমন ও প্রস্থানের মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত মাঝের পাঁচদিন নানা আয়োজনে চলে দুর্গোৎসব।
রাজধানীর ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে এদিন বিকেলে সাড়ে ৩টায় প্রতিমা বিসর্জনদেয় ধানমণ্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি। এর মাধ্যমে দেবীকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এরপর বিভিন্ন ঘাটে রাত ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ২৪৬টি মণ্ডপের প্রতিমা একে একে বিসর্জন দেয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, আজ বিজয়ী হয়েছেন দুর্গা মা। এ জন্য আজ আমাদের আনন্দের দিন। আমরা উৎসব করি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইজে জানাচ্ছি বিজয়ার শুভেচ্ছা।
এদিকে প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা বা দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন ও পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের কমিশনারের উপ-কমিশনান জাফর হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ও র্যব সদস্যরাও নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন।