নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ এরশাদ চৌধুরী
রাত পোহালেই চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে শুরু হবে আওয়ামী লীগের জনসভা। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে আসছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভার স্থল পলোগ্রাউন্ডে এরই মাঝে প্রস্তুত হয়েছে নৌকা আকৃতির ৩ হাজার ৫২০ বর্গফুট বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ। নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর নৌকার আকৃতিতে তৈরি মঞ্চটিতে বসতে পারবেন প্রায় ২০০ জন নেতা। পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার স্থলকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে বসবেন কারা সেটি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এসএসএফ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী যে মঞ্চে বক্তব্য দেবেন সেই মঞ্চে সাজসজ্জার কাজ চলছে। নতুন আঙ্গিকে সেজেছে মাঠসহ আশপাশের এলাকা। এখন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীকে বরণের অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী। সমাবেশ সফল করতে গত এক মাস ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এই জনসভায় স্মরণকালের জনসমাগম ঘটবে। গানের সুরে সুরে চলছে মাইকিংসহ প্রচার–প্রচারণাও।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী যে সব এলাকা দিয়ে জনসভাস্থলে পৌঁছাবেন এবং জনসভা শেষ করে ফিরে যাবেন সেসব এলাকাকে নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল লিখন, আলোকসজ্জা ও তোরণ নির্মাণসহ নানা সাজসজ্জায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম।
দীর্ঘ ১০ বছর ৯ মাস পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক এই পলোগ্রাউন্ডে আগামীকাল বক্তব্য রাখবেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ–উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা করা হবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে। এ কারণে চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও দলের নেতারা নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের শক্ত অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। উপজেলা থেকে শহরের প্রতিটি অলিগলিতে দিনরাত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন গত এক মাস ধরে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে দ্রুত পাল্টে গেছে বন্দরনগরীর চিত্র। পুরো নগরজুড়ে করা হয়েছে সাজসজ্জা, রাতে করা হচ্ছে লাইটিং। উৎসবের আমেজ শহরের প্রতিটি প্রান্তে।
এদিকে জনসভাকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য জনসভার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্টোপালিটন (সিএমপি) পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। এর মধ্যে নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, জনসভা মঞ্চ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও পলোগ্রাউন্ডের চারপাশে ও ভেতরে টহল দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এম.পি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের ১০ বছর পর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও স্থানীয় ইস্যু সম্পর্কে মুক্ত কণ্ঠে কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে উৎসব বিরাজ করছে। শুধু শহরে নয়, উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষও প্রধানমন্ত্রীকে এক পলক দেখতে ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডে চলে আসবেন। তাই এই জনসভাকে সফল করে তোলার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
প্রচারণার ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ৪ ডিসেম্বরের জনসভাকে সফল করতে নগরজুড়ে আমাদের প্রচারণা চলছে। সারাদিন ট্রাকে করে প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ করছেন নেতাকর্মীরা। প্রতিটি ওয়ার্ডের অলিগলিতে মানুষকে প্র্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। আমাদের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে সভা হচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের নির্দিষ্ট ২৪ স্থানে ও সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে মাইকিং হচ্ছে। ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে গত ১ ডিসেম্বর থেকে মাইকিং চলছে। মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন সাজসজ্জার কাজ চলছে। চট্টগ্রামবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য ও বরণের জন্য।