ঢাকার ধামরাইয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও মাতব্বরদের বিরুদ্ধে এক প্রবাসীর স্ত্রী ও তার প্রেমিককে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, নির্যাতনের মুখে প্রবাসীর ওই স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রেমিককে ৫ লাখ টাকাও জরিমানা করা হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বর মিলে ৪ ও ৭ বছর বয়সী দুই মেয়েসহ স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় প্রবাসীর এক স্ত্রীকে। ওই নারী কোন পথ না পেয়ে বর্তমানে বাবার বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা গ্রামে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রবাসী মনির হোসেন প্রবাসে থাকার সুবাধে তার স্ত্রী জাহিদুল ইসলাম (৩০) ইসলাম নামে এক যুবকের দোকান থেকে সব সময় রাজার সদাই করতো। গত মঙ্গলবার রাতে জাহিদুল ইসলাম ওই নারীর বাড়িতে পাওনা টাকা আনতে যান। এসময় আগে থেকে গেলে ওৎ পেতে থাকা জনতা জাহিদ ও ওই নারীকে এক ঘরে আটকে রেখে স্থানীয় লোকজনকে খবর দেন। পরে বিষয়টি শুনতে পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও মাতাব্বররা এসে জাহিদকে রাত ভর নির্যাতন করে, তার কথার ভিডিও ধারণ করে। একপর্যায়ে ৫লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার অর্থের জন্য চাপ সৃষ্টি করে তার কাছ থেকে দুটি ব্যাংকের সাদা চেক ও ননজুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়। এবং সেই সাথে ১০ শতাংশ জমির দলিলও কব্জা করে মাতব্বররা।
ভুক্তভোগী জাহিদ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছে।
স্থানীয়রা জানান, জাহিদের সাথে প্রবাসে থাকা মনিরের স্ত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওই নারীর বাড়িতে জাহিদের যাতায়াত লক্ষ করত। এলাকাবাসী বিষয়টি টের পেয়ে গোপনে ওই বাড়ির আশপাশে পাহারা বসায়।গত মঙ্গলবার রাতে জাহিদ ওই নারীর ঘরে এলে পাহারাদাররা দুজনকে আটক করে। এরপর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার ও মাতব্বরদের ডেকে আনা হয়। দুজনকে বেঁধে রেখে শাসনের নামে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়। ভোরে কাজী ডেকে এনে ওই নারীর প্রবাসে থাকা স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, ইউপি সদস্য বোরহান উদ্দিন ও স্থানীয় মাতব্বর। । এরপর তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দিলে ওই নারী গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের গাঙ্গুটিয়া বাজারের পূর্বপাশে তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ওই প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, জাহিদ তার বাড়িতে পাওনা টাকা নিতে এলে গ্রামবাসী তাকে আটক করে আমাদের দুজনকে এক কক্ষে আটকে রেখে আপত্তিকর ভিডিওচিত্র ধারণ করে। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে।
এ বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি পাশের বাজারে কনফেকশনারির দোকান করি। ওই নারী আমার কাছ থেকে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করে থাকে। গত মঙ্গলবার পাওনা টাকার জন্য ওই বাড়িতে যাই। দরজার কাছে দাঁড়াতেই ইলিয়াস হোসেনের নেতৃত্বে অন্যরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ওই প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে তালা দেয়। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, বোরহান উদ্দিন মেম্বার, মো. আব্দুল হক, মো. আব্দুল বারেক ও আবেদ আলীসহ মাতব্বরদের ডেকে আনা হয়। তারা আমাকে রাতভর নির্যাতন করে। তারা আমাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে। তাদের দাবি করা নগদ ৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় আমার কাছ থেকে ব্যাংকের দুটি ব্ল্যাংক চেক ও নন-জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে সই নেন। সেই সাথে আমার ১০ শতাংশ জমির দলিলও তারা নিয়ে নিয়ে আমাকে আমার পরিবারের কাছে ছেড়ে দেন।
এ ব্যাপারে ধামরাই থানায় আমি একটি লিখিত অভিযোগ করি। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধী নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছি। তবে জরিমানার টাকার জন্য আমার পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য বোরহান উদ্দিন বিষয়টি দামাচাপা দেয়ার জন্য মিটে গেছে বলেন। কিন্তু আজও স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার এমনকি মাতব্বররা ভুক্তভোগী জাহিদকে জরিমানার টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান জরিমানার ৫ লাখ টাকার কথা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ওই নারী জাহিদুলের কাছে টাকা পাইতো, সেই টাকা নেয়া হয়েছে জাহিদের কাছ থেকে। তালাকে বাধ্য করা হয়েছে বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, সে স্বেচ্ছায় তার প্রবাসী স্বামীকে তালাক দিয়েছে। তবে সাদা কাগজে স্বাক্ষর, ব্ল্যাঙ্ক চেক ও জমির দলিলের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে ধামরাই থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) জলিল বলেন, লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করছে। তবে এখনো কোন সমাধান হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।