ফরিদপুর প্রতিনিধি
দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় গ্রেফতার ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মালিকানাধীন সাউথ লাইন পরিবহনের ১২টি বাসে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে শহরের গোয়ালচামটে নতুন বাস টার্মিনালের পাশে সাউথ লাইন পরিবহনের গ্যারেজে এ ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম. এ. জলিল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন,শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে শহরের গোয়ালচামটে নতুন বাস টার্মিনালের পাশে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তিনি জানান, সেখানে মোট ২২টি বাস রাখা ছিল। এর মধ্যে ১২টি বাসেই একসাথে আগুন লাগে। রাত আড়াইটার দিকে আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হই।
তিনি আরো বলেন, ফরিদপুরের সাউথ লাইন নামে পুড়ে যাওয়া ওই বাসগুলো অর্থপাচার মামলায় গ্রেফতার শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মালিকানাধীন। ২০২০ সালের ৭ জুন পুলিশের অভিযানে বরকত-রুবেল গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে এসব বাস জব্দ করা হয়। এরপর থেকে সেগুলো এখানেই রাখা ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সারিবদ্ধভাবে খোলা জায়গায় রাখা বাসগুলোয় হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। পরে স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়।
বরকতের স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন বলেন, আমার স্বামীর মানিলন্ডারিং মামলায় গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের বাসসহ মোট ৫৫টি গাড়ি আদালতের নির্দেশে সিআইডি জব্দ করে। এর মধ্যে ১২টি বাস ফরিদপুরের গোয়ালচামট বিদ্যুৎ অফিসের সামনে একটি শেডের নিচে রাখা ছিল। এই ঘটনায় কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লাম। বিষয় নিয়ে আমরা আদালতের দারস্থ হব।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শিপলু আহমেদ জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি।
ফরিদপুরে সিআইডি ইন্সপেক্টর নাসির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন , ঘটনাটি অবশ্যই সিআইডি কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। তবে যেহেতু মামলার তদন্ত আমরা ফরিদপুর সিআইডি করছি না সে কারণে আমরা এই বিষয়ে কথা বলতে পারছি না।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৬ মে রাতে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লাবাড়ী সড়কে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলা হয়। পরে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তিনি। ওই ঘটনায় ৭ জুন রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হন বরকত ও রুবেল। তাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অর্থপাচারের খবর এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে, বেশ কয়েকটি মামলাও হয়।
অর্থপাচারের অভিযোগে ওই বছর ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ। তদন্ত শেষে গত বছরের ৩ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস।