পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে কর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি। নিজের সহায়-সম্বল বিক্রি করে ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করে বৈধ কন্ট্রাক্ট ভিসা, বিএমইটি ছাড়পত্র, কাজের চুক্তিপত্র নিয়ে সৌদি পাড়ি জমান তারা। এখন উল্টো মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব বাংলাদেশি। বর্তমানে জেদ্দার আজিজিয়া এলাকায় একটি ভবনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জেদ্দায় একটি ভবনে আশ্রয় নেয়া এসব বাংলাদেশি জানিয়েছেন, জনশক্তি রপ্তানির সব নিয়মনীতি মেনে দালালরা কৌশলে হাজার হাজার ফ্রি ভিসাকে কন্ট্রাক্ট ভিসা বলে চালিয়ে দেয়। এরফলে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার শ্রমিক প্রতারণার স্বীকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরছেন। অথচ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
প্রবাসীরা জানান, বাংলাদেশি দালালের খপ্পরে পড়ে কেউ দুই মাস, কেউ তিন মাস, আবার কেউ ছয় মাস খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। কোম্পানি তাদের কোনো কাজ দিচ্ছে না। উল্টো গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের সন্ধান পাচ্ছে না।
কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যেকেই ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে এসেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি বদ্ধ বাড়িতে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, তারা কাজ চাইলে কয়েকজন মিশরীয় নাগরিক দিয়ে তাদের বেদম মারধরও করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশি শ্রমিকরা জানান, এ বিষয়ে জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল এবং শ্রম কাউন্সিলর এম কাজী এমদাদুল ইসলামকে বিস্তারিত অবহিত করলে তারা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে একজন আইন সহকারী পাঠান এবং আটক শ্রমিকদের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতারণা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় দেশে এবং প্রবাসে বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে দালাল চক্র। এ সিন্ডিকেট তিন ভাগে কাজ করছে। একটি অংশ বাংলাদেশে ভিসা বিক্রির কাজে নিয়োজিত; আরেকটি সৌদি আরব থেকে ভিসা সংগ্রহ করা এবং অন্যটি সৌদিতে কাজের সন্ধানে থাকে।
যেসব বেসরকারি নিয়োগ সংস্থা বিদেশে কর্মী পাঠায়, তারা কর্মী খোঁজার ক্ষেত্রে মূলত স্থানীয় দালালদের ওপর নির্ভরশীল। এসব দালাল বিদেশ যেতে প্রকৃত যে খরচ হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আদায় করে বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে।
যেসব কর্মী বিদেশ যান, সেখানে যাওয়ার পর তারা প্রতিশ্রুতির চেয়ে কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হন। একই সঙ্গে মাত্র কিছুসংখ্যক বিদেশ গমনেচ্ছু যথাযথ কাজ পাচ্ছেন। বাকিরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ পান না। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারকেই কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সৌদি প্রবাসীরা।