মোঃ জিলহাজ বাবু
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট (থোক বরাদ্দ) থেকে চার দফায় ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল পৌরসভা। ভবন সম্প্রসারণের জন্য এই বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। কাগজে-কলমে ভবন নির্মাণ দেখানো হলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব নেই। কাজের কাজ না করেই তুলে নেয়া হয়েছে বরাদ্দের ৬০ লাখ টাকা। ভুয়া বিল-ভাউচারে পৌর মেয়য় সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। এরপর কয়েক দফায় একটি পূর্ণাঙ্গ ভবন নির্মাণ করা হয়। সে ভবনেই চলছে কার্যক্রম। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় বারেরমতো দায়িত্ব পালন করছেন নাচোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ খান ঝালু। পৌরসভার ভবন নির্মাণের জন্য ৬০ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ পায় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বরাদ্দের টাকা উঠিয়ে নিলেও দৃশ্যত: কোনো ভবন নির্মাণ হয়নি।
চলতি বছরের ৩০শে এপ্রিল নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) একটি চিঠি দেন পৌর মেয়র। সেই চিঠিতেও তিনি পৌরসভার ভবন নির্মাণ করা হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন। তবে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন মেয়র।
উন্নয়ন বাজেটের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, পৌরসভা-২ শাখা থেকে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট থেকে চার দফায় পৌরসভার নতুন ভবন সমপ্রসারণের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ খান ঝালু পৌর ভবন নির্মাণ না করেই ভবন নির্মাণের পুরো টাকাই ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে উত্তোলন করে নেন। অথচ বরাদ্দপত্রের ৭ নম্বর কলামে উল্লেখ রয়েছে, বরাদ্দকৃত খাত ছাড়া অন্য কোনো খাতে অর্থ ব্যয় করা যাবে না। ভবন নির্মাণে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল কাউন্সিলরদের কাছেও সেই তথ্য গোপন করে পৌর মেয়র। কোনো কাউন্সিলরই জানেন না যে ভবন নির্মাণে ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল।
কাউন্সিলর মতিউর রহমান বলেন, আমি দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করে আসছি। মেয়র আব্দুর রশিদ খান ঝালু সে সময়ে আমাদের জানিয়েছিলেন ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। কী কাজে এসেছে তা স্পষ্ট করেননি মেয়র। সে সময়ে কিছু টাকা কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয়েছিল আর বাকি টাকা মেয়র কী করেছেন তা আমি বলতে পারবো না। পৌর সভা নির্মাণের পর নতুন করে কোনো ভবন নির্মাণ হয়নি।
পৌরসভার আরেক কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি ২০১৬ থেকে বর্তমানে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। মেয়র কোনো বরাদ্দ বা কাজের বিষয়ে আমাদের বলে না। তিনি একাই সবকিছু করেন। যখন পিডি পরিদর্শনে আসেন তখন মেয়র আমাদের খালি হ্যাঁ বলতে বলেন। ভবন নির্মাণের বরাদ্দের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। পৌর ভবন নির্মাণ হয়নি এইটুকু বলতে পারি।
জানতে চাইলে নাচোল পৌরসভার মেয়র মেয়র আব্দুর রশিদ খান ঝালু বলেন, টেন্ডার যে কোনো সময় করা যায়। চলতি বছরের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।