আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী) : ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঋতু অনুযায়ী আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুইমাস বর্ষাকাল। সাধারণত এই দুই মাস আমাদের দেশে বৃষ্টি হতেই থাকে। আর এই বৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা এই মৌসুমে রোপা-আমন ধান আবাদ করে থাকে।
আষাঢ় মাসের শেষ। শ্রাবণের প্রথম হতে চললেও দেখা নেই বৃষ্টির। প্রচন্ড রোদ-তাপদাহ ও গরমে অতিষ্ট প্রাণীকূলেও। এমন অবস্থা যখন চলমান, তখন পুরো রাজশাহীর বরেন্দ্রঅঞ্চল জুড়ে অনাবৃষ্টিতে পুড়ছে ফসলের মাঠ। বিশেষ করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ধানের জমি গুলোতে পানি শুকিয়ে চৈচির হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে টানা প্রায় ২০ দিনের অধিক বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর বা খালের পানি দিয়ে কোনরকম চাষাবাদ করছে কৃষকরা। আর যেসব কৃষক বিএমডিএর আওতাধীন গভীর নলকূপ থেকে পানি নিয়ে আবাদ করছেন। তাদের একদিন পরপরই জমিতে পানির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ফলে সময়মত পানি সব কৃষক পাচ্ছে না।
সময়মতো বৃষ্টি না হলে পানি সংকটের কারণে আমন ক্ষেত হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ফলে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক মামুন জানান, আমি সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছি। টানা প্রায় ২০ দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমার ধানের জমিতে পানি শুকিয়ে জমি ফেঁটে চৈচির হয়ে গেছে। ডিপ-টিউবওয়েল থেকে পুরো জমিতে পানি দিয়ে তা কভার করা সম্ভব হচ্ছে না। একদিন পর পর জমিতে পানির প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি ছাড়া ফসল বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে জানান এই কৃষক।
মইদুল ইসলাম নামের অপর কৃষক জানান, বর্তমান সময়টা কৃষক আকাশের বৃষ্টির নির্ভর করে আবাদ করে থাকে কিন্তু আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেলেও বৃষ্টির কোন দেখা নাই। ফলে বৃষ্টির অভাবে পুরো আবাদ করতে পারিনি। ডিপ-টিউবওয়েলেও পানি সঠিক সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না ফলে আবাদ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে বলে এই কৃষক জানান।
তানোর উপজেলার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, বর্তমান যে খড়া এমন অবস্থান ধানের জমিতে প্রচার পানির প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। শ্রীঘ্রই বৃষ্টির পানি না হলে ফসল বাঁচানো দুষ্কর হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার কৃষক আতাউর রহমান জানান, বৃষ্টির কারণে আমরা আবাদ শুরু করতে পারিনি। আমাদের সব জমি ডিপ-টিউবওয়েলের আওতায় না হওয়ার করনে বেশকিছু জমি আবাদ শুরু করতে পারিনি। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি কখন বৃষ্টি হবে তখনই আবাদ শুরু করবো।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শারমিন সুলতানা বলেন, এবার উপজেলায় ২৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবার ২৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর ছিলো। বৃষ্টির কারনে অনেক কৃষকের আবাদ বন্ধ আছে আবার যাদের আবাদ করা হয়েছে তাদের পানির সংকট থাকায় জমিতে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে।
এসব সমস্যা নিয়ে আমরা বিএমডিএর সাথে কথা বলেছি তারা যাতে কৃষকদের সময় মতো পানি দেয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ না দিয়ে পারায় কৃষকরা বিপদে পড়ছে। যেহেতু এটা প্রাকৃতিক বিষয় তাই বৃষ্টি না হলে কৃষকদের পানির সমস্যা সহসা সমাধান করা সম্ভন নয়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ড. তৌফিকুর রহমান জানান, এবার রোপা-আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত জেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। গতবার আবাদ হয়েছিলো ৭৭ হাজার ৩২৫ হেক্টর ।
তিনি আরো বলেন,রাজশাহী অঞ্চলে টানা পুরো বর্ষা মাসেই বৃষ্টি নাই ফলে কৃষকরা সময়মত আবাদ শুরু করতে পারেনি। আমরা বিএমডিএর সাথে কথা বলেছি কৃষকদের ঠিক মত যাতে পানি সরবরাহ করে। অনাবৃষ্টির কারণে এখন পর্যন্ত ফসলের বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি ।চলতি সপ্তাহে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আশাকরা যায় অতিদ্রুত পানির সমস্যা কেটে যাবে ।