রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, পশ্চিমা নেতারা নিজেদেরকে ব্যতিক্রমী এবং মহিমান্বিত বলে মনে করেন; তারা অযৌক্তিক ভয়ের বিভ্রম দ্বারা চালিত হন। বুধবার আরটি আরবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে আমাদের পশ্চিমা বন্ধুদের অনেক ফোবিয়া, অনেক জটিলতা রয়েছে। তারা ‘সুপেরিওরিটি কমপ্লেক্স’ ও অভ্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন।’
তিনি বলেন, ‘যে বিষয়ে যদি পশ্চিমাদের অন্তর্ভুক্ত করা না হয় বা ওই বিষয়টির নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমারা না থাকে, তাহলে তারা এর বিরোধিতা শুরু করে।’ তিনি বলেন, তারা এটাকে আধিপত্যের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করে।
উদাহরণ হিসেবে রাশিয়ার অংশগ্রহণে গঠিত বিভিন্ন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট ও সংস্থার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। ল্যাভরভ বলেন, ‘এক্ষুণি সময়, তাদের এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।’
এমন এক সময়ে তিনি এ মন্তব্য করলেন, যখন ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার টানাপোড়েন চরমে।
রাশিয়ার শীর্ষ এ কূটনীতিক বলেন, ইউক্রেন আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার সাথে শাস্তি দেয়ার অভিযান, যেখানে ওয়াশিংটন পুরো বিশ্বকে নথিভুক্ত করতে চায়, এটি সর্বশেষ উদাহরণ।
তিনি বলেন, ‘অ্যাংলো-স্যাক্সন জোটের ঔদ্ধত্যের কোন সীমা নেই এবং আমরা প্রতিদিন এর নিশ্চিতকরণ খুঁজে পাই।’ ল্যাভরভ বলেন, ‘পশ্চিম প্রতিদিন তাদের দূত এবং প্রতিনিধিদের ব্যতিক্রম ছাড়াই প্রতিটি (দেশের) রাজধানীগুলোতে পাঠায় আলটিমেটাম প্রদান এবং ব্ল্যাকমেইল করার জন্য।’
ল্যাভরভ জানান, এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বেশিরভাগ দেশ চাপ প্রতিরোধ করছে দেখে রাশিয়া খুশি। তিনি বলেন, ‘সেই জাতিগুলো তাদের জাতীয় মর্যাদার সাথে আপস করতে চায় না এবং (পশ্চিমের) পক্ষে চাকর বালক হিসেবে কাজ করে বেড়াতে চায় না।’
তিনি বলেন, তাদের মনোভাব নতুন কিছু নয় এবং এটি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার আধুনিক সংস্করণ। সৌভাগ্যবশত, ইতিহাস বিশ্বের জন্য বহুপাক্ষিক ভবিষ্যতের পক্ষে। তাই পশ্চিমা দেশগুলোর আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা মানবতার স্বাভাবিক অগ্রগতির বিরুদ্ধে কাজ করছে।
ল্যাভরভ বলেছেন, পশ্চিমাদের বিশ্বের সাথে কাজ করার অধিকারের অনুভূতি প্রায়শই বিপর্যয়কর পরিণতি নিয়ে আসে। ১৯৯০ এর দশকে যুগোস্লাভিয়ার ক্ষেত্রে এটি ছিল, যেটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল যখন যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থের প্রয়োজন ছিল; ২০০৩ সালে ইরাকের সাথে, যখন যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে আক্রমণ করার জন্য মিথ্যা অজুহাত ব্যবহার করেছিল এবং ২০১১ সালে লিবিয়ার সাথে।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, ইরাক এবং লিবিয়া উভয় দেশেই কর্তৃত্ববাদী শাসন ছিল। কিন্তু সেখানে কোনো সন্ত্রাসী ছিল না। কোন অবিরাম যুদ্ধ এবং সামরিক উস্কানি ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘এটাই পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর মানসিকতা। তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের নিরাপত্তা সারা বিশ্বের উপর নির্ভর করে এবং এইভাবে তাদের বিশ্ব শাসন করা উচিত।’