প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিটেন্সে শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত। প্রতিনিয়তই বিশ্বের নানা দেশে কর্মী ভিসায় যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। করোনাকালে এ গতি কিছুটা স্থবির হলেও এখন প্রবাসে যাত্রা ও রেমিটেন্সে গতি এসেছে। পৃথিবীতে ১৬০ টি দেশে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী রয়েছে।
তবে দু:খজনক হচ্ছে চলতি বছর ১০ এপ্রিলের মধ্যে ১০৫৩ জনের মৃতদেহ দেশে এসেছে। যা গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ জনের মৃতদেহ আসছে। আবার নানা কারণে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশির মরদেহ বিদেশেই দাফন করা হচ্ছে।
ওয়েজ আর্নার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের (ডব্লিউইডব্লিউবি) তথ্য অনুযায়ী, বাইরে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথম সারির ১০ টি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশি। এবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে ৯৭১ টি মৃতদেহ দেশে আনা হয়েছে এবং এপ্রিলের প্রথম ১০ দিনে ৮২ টি মৃতদেহ দেশে পৌছেছে।
শরণার্থী এবং অভিবাসী বিষয়ক গবেষণা ইউনিটের প্রধান তাসনিম সিদ্দিকি বলেন, প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশিত তথ্যের চেয়েও বেশি। অধিকাংশ কর্মীর বয়স ৩০-৩৫ এর মধ্যে এবং তারা ছিল পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। নিঃসন্দেহে এটা কর্মীদের অকাল মৃত্যু। সরকারের উচিত অকাল মৃত্যুর উপযুক্ত কারন খুজে বের করা এবং তা সমাধান করা।
ডব্লিউইডব্লিউবি এর ডিরেক্টর আরিফ আহমেদ খান বলেন, তারা শুধু নিবন্ধিত কর্মীদের জরিপ প্রকাশ করেছে। যেখানে অনেক অভিবাসী নিবন্ধন করা ছাড়াই বাইরে কর্মী হিসেবে যায়।
জরিপ অনুযায়ী দেখা যায়, দেশে মৃতদেহ আনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিগত ২০ বছরে ৪১ হাজার ৫৩ জনের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এরই মধ্যে ২০০২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ১০ হাজার ৭৮৫ টি মৃতদেহ এবং ২০১২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৩০ হাজার ২৬৮ টি মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মী মারা যাচ্ছে। এ তালিকায় এর পরেই অবস্থান মালয়েশিয়া। মৃতদের অধিকাংশ নারী, যার বিরাট অংশ সৌদি আরব থেকে এসেছে।
ব্রাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম হেড শরিফুল হাসান বলেন, মৃত অধিকাংশ মহিলা কর্মীর দেহকে সৌদি আরব থেকে আনা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০০-২৫০ মহিলা কর্মীর মৃতদেহ আসে। যার অধিকাংশই সৌদি আরবের।
এদিকে ইউরোপীয়ান বর্ডার কোস্ট গার্ড এজেন্সি জানায়, এ বছরের প্রথম দু মাসে ১ হাজার ১৪ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করে।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, দেশে কাজের অভাব থাকায় মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে। আমাদের কাছে মৃত অভিবাসীর সঠিক সংখ্যা এবং মৃত্যুর কারন জানা নাই। আমাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অনেক অভিবাসী অপব্যবহারে এবং অনেকে অবৈধভাবে যেতে গিয়ে রাস্তায় মারা যায়।
তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, কিছু মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ মৃত্যুই স্বাভাবিক নয় এবং অপ্রত্যাশিত।
ডব্লিউইডব্লিউবি এর এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানায়, আমাদের কাছে থাকা প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ৬৮.২৩ শতাংশ মৃত্যুই অস্বাভাবিক। এছাড়া ১০.৫ রোড এক্সিডেন্ট এবং স্ট্রোক হার্ট এট্যাক এর কারনে ২.৬ এবং ১.১৭ শতাংশ অন্যান্য কারনে হয়ে থাকে।
তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের তার কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপার যত্নবান এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে কর্মীদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত।সূত্র -প্রবাস জার্নাল