স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাংলাদেশ এখন করোনামুক্ত। পাশাপাশি করোনায় এখন আর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায় না।
বিশ্ব টিবি (যক্ষ্মা) দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে শেরাটন হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইউএসএআইডি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
যক্ষ্মা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, অনুষ্ঠানে সে বিষয়ে সিলেটের সুনামগঞ্জের একটি পরিবার গল্প তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি যক্ষ্মার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে অনুষ্ঠানে পুতুল নাচের আয়োজন করা হয়।
জাহিদ মালেক বলেন, দেশে এখন সংক্রামক রোগের সংখ্যাও খুবই কম। দেশে পাঁচ থেকে দশটির বেশি সংক্রামক রোগ নেই। তবে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যা এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবার বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সমগ্র দেশে আটটি হাসপাতাল হচ্ছে। ঢাকায় একটি বার্ন ইউনিট আছে। একইভাবে দেশের অন্য সাতটি বিভাগেও এই বার্ন ইউনিট স্থাপন করছি।
মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর যে ১০টি দেশে টিবি রোগের দেখা পাওয়া যায়, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যেখানে দারিদ্র্য বেশি, সেখানে টিবি রোগের সংখ্যাও বেশি। সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়।
তিনি বলেন, সফলতার কথা যদি বলি, তাহলে আমাদের দেশে যক্ষ্মায় ভালো হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৯৫ শতাংশ। ২০০৭ সালের হিসাবে দেশে প্রতি লাখে ৫৪ জন রোগী যক্ষ্মায় মারা যেত। বর্তমানে সেই সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। যাতে বুঝা যায়, বাংলাদেশ যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে।
করোনায় যেখানে দৈনিক ১০-১২ জনের মৃত্যু হতো সেখানে যক্ষ্মায় প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রায় ১০০ জন মারা যায় উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ শিশু প্রতিবছর যক্ষ্মায় সংক্রমিত হয়। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে দেশে বেশ কিছু টিবি হাসপাতাল আছে। এখন যক্ষ্মা মোটামুটি দেশের সব হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষা করা যায়। দেশের সব উপজেলায় যক্ষ্মা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি সারা দেশে যক্ষ্মা রোগের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। আর টিবি রোগের এই ওষুধ বাংলাদেশে তৈরি করা হয়।
যক্ষ্মায় আমাদের কী করণীয়, সে বিষয়ে তিনি বলেন, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, যক্ষ্মা হলে কেউ লজ্জায় কিছু বলে না। এতে সংক্রমণ আরও বেশি করে ছড়ায়। তাই যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দিলে অতি দ্রুত নিকটস্থ যক্ষা নিরাময় কেন্দ্রে পরীক্ষা করতে হবে। যাতে নিজেকে রক্ষার পাশাপাশি আশেপাশের মানুষকেও রক্ষা করা যায়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা করোনার আগে আমরা বুঝতে পারিনি। কারণ স্বাস্থ্য সেবা ছাড়া আমাদের সব প্রতিষ্ঠানই অচল। আমি মনে করি, সবাই মিলে কাজ করলে এই যক্ষ্মা রোগ পুরোপুরি শেষ করতে পারব। পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের এলাকায় হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত ভিজিট করবেন, যাতে করে কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নিতে পারেন।