প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে অন্যদের জন্য ‘মডেল’ এবং ‘উদাহরণ’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কেননা, উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করেছে। ভারতের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠীর সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবন কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমানা ও সমুদ্রসীমা সমাধানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলোর (সমাধান) সমন্বয়ে এই উদাহরণ তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন-আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় জনগণের সহায়তা ও অবদান সবসময় স্মরণ করি।
ভারতের নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে নিজের বাড়ির মতো অনুভব করছেন। কারণ, প্রকৃতিগত দিক থেকে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। প্রেস সচিব ভারতের নৌপ্রধানকে উদ্ধৃত করে জানান, উভয় দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা সম্পর্কে অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী বলেন-যদি বাংলাদেশ নৌবাহিনী কোনো সহযোগিতা চায়, তবে ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ‘না’ বলার কোনো সুযোগ নেই।
ভারতের নৌবাহিনী প্রধান বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর (বিএমএম) পরিদর্শন করে এটিকে বিশ্বমানের উল্লেখ করে বলেন, তিনি বিএমএম পরিদর্শন করে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছেন। এটি শিক্ষামূলক, কার্যকর এবং তিনি কিছু ধারণা সঙ্গে করে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন যা তিনি তাদের সংস্থাকে প্রদান করবেন, যাতে তারা সেগুলো অনুকরণ করতে পারে।
বাংলাদেশের অনেক নৌ কর্মকর্তা ভারতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন উল্লেখ করে অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী বলেন, তিনি তার বাংলাদেশি সমকক্ষকে বলেছেন যে বাংলাদেশ চাইলে আরও অফিসার পাঠাতে পারে।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতীয় নৌপ্রধান অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরকে ‘শান্তিপূর্ণ’ রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েরই একই মানসিকতা রয়েছে এবং উভয় দেশই একসঙ্গে কাজ করবে, যেহেতু তারা এই অঞ্চলে কোনো ব্যাঘাত আশা করে না। বৈঠকে তিনি ধানমন্ডি-৩২ এ বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনের কথাও উল্লেখ করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগ ও অবদানের প্রতিফলন দেখে অভিভূত হন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়নে এডিবির সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সমুদ্রসীমা থেকে প্রতিটি সম্পদ আহরণের পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) বাস্তবায়নে সহযোগিতা চেয়েছেন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াং মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবন কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এই সহযোগিতা চান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা এডিবির কাছে কৃষি গবেষণায় সহায়তা চেয়েছেন, যদিও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ভালো করছে এবং দেশে প্রচুর ভালো গবেষক রয়েছেন।
বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে বিশেষ করে আমাদের নিজস্ব পণ্যের বড় বাজার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কৃষিকে অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য। এর সঙ্গে শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। কৃষিকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে আমরা শিল্পায়নের পক্ষে।’