দেশের বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই চলমান ডলার সংকট নিরসনে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাংকিং চ্যানেলে (বৈধ পথে) প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য প্রণোদনা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেয় ব্যাংকগুলো। ফলে খোলাবাজার ও হুন্ডি (অবৈধ পথ) দরের কাছাকাছি হওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ে নতুন জোয়ার সৃষ্টি করেছে।
সদ্যবিদায়ী অক্টোবর মাসে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের (১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার) প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) প্রায় ২১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার বেশি। সে হিসেবে প্রতিদিন এসেছে প্রায় ছয় কোটি ৩৯ লাখ ডলার বা ৭০৫ কোটি টাকা।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছিলো ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (এক টাকা সমান ১০৯.৫০ টাকা ধরে) ১৪ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। যা ছিল গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় বা প্রবাসী আয়। এর আগে গত ২০১৯ সালের মে মাসে ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ডলার এসেছিল।
জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের (১.৯৭ বিলিয়ন ডলার) প্রবাসী আয় পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগস্টে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। গত জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২.১৯ বিলিয়ন ডলার) প্রবাসী আয় বা প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে। একক মাস হিসেবে যেটি ছিল প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসা প্রবাসী আয়। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল।
ডলার প্রতি বাড়তি প্রণোদনা (৫ শতাংশ) দেয়ায় প্রবাসী আয় প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনিতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রণোদনা বৃদ্ধির ফলে বৈধপথে প্রবাসী আয় বাড়ছে। আর প্রবাসী আয় বাড়লে আমদানি ব্যয় মেটানো সহজ হবে। এটি দেশের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, অক্টোবর মাসের পুরো সময়ে ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার এসেছে দেশে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৫ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বিষেশায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে পাঁচ কোটি ৮২ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৭৫ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬০ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রবাসী আয় এসেছিল। বিদায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন দুই হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয়। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।