ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর ভিন্ন ভিন্ন নামে সন্ত্রাসী বাহিনীকে মদদ দিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ দলের নেতা-কর্মীদের।
তারা জানান, সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই টেন্ডার বাণিজ্য ও চাকরি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। তারা তাকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ফরিদপুরের আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার অন্যতম আসামি খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবরকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সিআইডির দাখিল করা চার্জশিটে মানি লন্ডারিংয়ের অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে তার। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাড়িতে হামলা, টেন্ডারবাজি ও চাকরি বাণিজ্যের একাধিক অভিযোগও রয়েছে বাবরের নামে।
জেলার আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামীম হক বলেন, কয়েক বছর আগেও ছোট ব্যবসা করে দিনাতিপাত করতেন বাবর। ভাইয়ের ক্ষমতা ও দলীয় পদ ব্যবহার করে হঠাৎই কোটি কোটি টাকা, আলিশান বাড়ির মালিক বনে যান তিনি। বিদেশেও গড়েছেন ব্যবসা। তার আধিপত্য ও ক্ষমতার দাপটে দলের ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। তিনি তাদের প্রায় সময়ই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন।
জেলার অনেক নেতা মনে করেন, বাবরকে আইনের আওতায় আনায় দলের কলঙ্ক মোচন হয়েছে।
বাবরকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, বাবর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন না। তিনি সুযোগ-সুবিধা হাসিল করতেই দলে যোগ দেন। তার ভাই সাবেক মন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে বাবর বরাবরই অনিয়ম ও দুনীতি করেও ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
যেভাবে উত্থান
বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর এক সময়ে ছিলেন ফরিদপুরের সাবেক সাংসদ ও মন্ত্রী মরহুম চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বাবর তার ভাই খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নির্বাচনে সক্রিয় ছিলেন না। কিন্তু ওই নির্বাচনে খন্দকার মোশাররফ এমপি ও পরবর্তীতে মন্ত্রী হওয়ায় আস্তে আস্তে ভাইয়ের ক্ষমতা বলয়ে ঢুকে পড়েন তিনি।
এরপর থেকেই তার নাটকীয় উত্থান ঘটতে থাকে। ২০১০ সালের মাঝামাঝি জেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। তার ভাই ও সাবেক মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে জেলার বিভিন্ন অফিস আদালতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।
বাবার ও তার মদদে গড়ে ওঠা ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, পাসপোর্ট অফিস, সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ২০১৪ সালে বড় ভাই ও সাবেক মন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে তার বিরোধিতাকারী দলের নেতাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। নির্যাতনের শিকার তাদের মধ্যে অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শওকত আলী জাহিদ, ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির ও অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাবুল।
বাবরের নির্যাতনের শিকার একাধিক নেতা জানিয়েছেন, যারা বাবরের কোনো সিদ্ধান্ত বা অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন তাদেরই শায়েস্তা করতেন তিনি। তার বিশেষ ‘ক্যাডার বাহিনী’ এসব নির্যাতন চালাতো।
দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন তিনি। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা। সূত্র-দেশ রূপান্তর