দেশে আবারও বাড়তে শুরু করে করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে ৩৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। চলতি বছরে দেড় মাসের ব্যবধানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সামনের কয়েক মাসে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এজন্য দ্রুত টিকা নেওয়াসহ সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ কোভিড আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর জানুয়ারির ১১ তারিখ পর্যন্ত চার মাসে কোভিড আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারির পর থেকে আজ পর্যন্ত কোভিড সংক্রমিত হয়ে ১১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে মারা গেছেন ছয়জন। আর জানুয়ারিতে মারা গেছেন পাঁচজন। গত বছরের ডিসেম্বরে যেখানে পুরো মাসে কোভিড সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২১০ জনের, সেখানে ফেব্রুয়ারির ১৭ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত এ সপ্তাহে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩৫৭ জন। কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে কারণ হিসেবে মানুষের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতা, ভ্যাকসিন না নেওয়া ও নতুন ভ্যারিয়ারন্টের প্রভাবকে চিহ্নিত করা হয়।
করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভ্যারিয়ান্ট জেএন ডট ওয়ান বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বলে এ বছরের শুরুতেই সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বাংলাদেশেও রোগীদের মধ্যে এই নতুন সাব ভ্যারিয়ান্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে কিছুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য শরফু্দ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কোভিড আক্রান্ত ৪৮ জন রোগীর জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে করা এক গবেষণা চালায় বিএসএমএমইউ। সেখানে উঠে আসে ৪৮ জনের মধ্যে ৩ জন নতুন ভ্যারিয়ান্ট জেএন ডট ওয়ানে আক্রান্ত। জেএন ডট ওয়ান আক্রান্ত রোগীদের প্রত্যেকেই দুই ডোজ টিকা দেওয়া ছিল।
এমন রোগীও দেখা গেছে যিনি তৃতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন-অর্থাৎ এর আগে দুইবার কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এবং তৃতীয়বার যখন আক্রান্ত হয়েছেন, তখন জেএন ডট ওয়ান সাব ভ্যারিয়ান্ট সংক্রমণ হয়েছে তার। কোভিডের অন্য সব সাব ভ্যারিয়ান্টের তুলনায় জেএন ডট ওয়ান সাব ভ্যারিয়ান্টটির উপসর্গ তুলনামূলক দুর্বল।
উপাচার্য শরফু্দ্দিন আহমেদ আরও জানান, জেএন ডট ওয়ান সাব ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত রোগীর রোগের লক্ষণের তীব্রতা কম। এছাড়া এই সাব ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও কম হয়।
আইইডিসিআরের সাবেক উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন বলেছেন, কোভিডের নতুন সাব ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে লাগাম টানতে হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সব ধরনের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সরকারি নির্দেশনা মানার বিষয়ে জোর দিতে হবে এবং মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
তিনি বলছিলেন, অসুস্থ হলে মানুষ স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই আগে যায়। কাজেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো থেকে কোভিড ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এসব জায়গায় দরজায় মাস্ক সরবরাহ করা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।
এছাড়া যাদের দুই ডোজ টিকা দেওয়া আছে তাদের পরবর্তী ডোজ টিকা নিতে উৎসাহিত করা, যারা দুই ডোজ টিকা দেয়নি তাদের শনাক্ত করে তাদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া, বয়স্কদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার মত কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়ে তাগিদ দেন তিনি।
গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে আইইডিসিআরের সাবেক উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ বছরে জুন-জুলাই পর্যন্ত কোভিড সংক্রমণের হার আরো বাড়তে পারে। এর আগের কয়েক বছরে আমরা দেখেছি যে ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে শুরু করে জুন-জুলাই পর্যন্ত কোভিড কিছুটা বাড়ে। কাজেই শীতকালে যখন বেড়েছে, এটা আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশে এই মৌসুমে মানুষের মধ্যে সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। কোভিডের পাশাপাশি আসন্ন বসন্তে এবং গ্রীষ্মে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রভাবও বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে মানুষ কোভিড টেস্ট করাচ্ছে না। আর টেস্ট না করানোর ফলে প্রয়োজনীয় সতর্কতাও মানছেন না অনেকে, যার ফলশ্রুতিতে কোভিড সংক্রমণ আরও বাড়ছে। মানুষের মধ্যে টেস্ট করার হার আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। কোভিড সংক্রমণের হার এখন যেহেতু বাড়ছে, কারো জ্বর হলেই সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টেস্ট করা উচিৎ। বিশেষ করে যেসব ব্যক্তি ঝুঁকিপূর্ণ বয়সে আছেন বা যাদের ডায়বেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের মত শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক হওয়া বেশি জরুরি।